১৬ তম বর্ষে পদার্পণ করবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ১৮ই অক্টোবর ২০২০ ১২:২১ অপরাহ্ন
১৬ তম বর্ষে পদার্পণ করবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের অন্যতম একটি নামকরা বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।১৮৫৮ সালে ব্রাক্ষ স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং নানা বাধা বিপত্তি দূর করে ১৬ তমে বর্ষে পদার্পণ করবে।ক্রমবর্ধমান সৃষ্টির চিরন্তন ধারা অনুসরণ করে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারাগাছ থেকে বৃক্ষে পরিনত হওয়ার এক বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের।এ যাত্রায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পর্যায়ক্রমে নিজের নামের পাশে যুক্ত করেছে স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।

সামান্য একটি পাঠশালা থেকে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠার এক নাটকীয় গল্পের সাক্ষী আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জবির এই গল্পটি  নাটকীয় হলেও বেশ কণ্টকাকীর্ণ। গল্পের শুরুটা জগন্নাথ রায় চৌধুরী  ১৮৫৮ সালে শুরু করে গেলেও গল্পটা আজও সগৌরবে লিখে যাচ্ছে জবির লড়াকু শিক্ষকগণ ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যানিকেতনের নাম ছিলো "ঢাকা ব্রাক্ষ স্কুল"।১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় চৌধুরী বাবার নাম অনুসারে এর নাম বদলে রাখেন জগন্নাথ স্কুল"।

১৮৮৪ সালে "জগন্নাথ স্কুল" দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজের মর্যাদা লাভ করে।পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজের মর্যাদা লাভ করে।এক সময় এটিই ছিলো ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান। তবে ১৯২১ সালে "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় "প্রতিষ্ঠিত হবার পর অনেক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।শিক্ষার পাশাপাশি বাঙলা ও বাঙালীর প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে শামিল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।এর সাথে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে "জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন" পাশ হয়।এরপর একই বছরের ২০ অক্টোবর এক আদেশে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে সমকালীন সরকার।প্রায় ১১.১১ একর জমির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত।প্রতিষ্ঠাকালে থেকে বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি অনুষদ, ২৮টি বিভাগ,প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী ও ৯৬০ জন শিক্ষক রয়েছেন।আমাদের ভবন সংখ্যা মোট ১০টি।এছাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে রয়েছে একটি শহীদ মিনার এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নামে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সাফল্য ও একাডেমিক শৃঙ্খলা যেকোন নব্য প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রোলমডেল স্বরূপ।সমসাময়িক অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় এত অল্প সময় জবির মতো উচ্চা আসনে বসতে পারেনি।হামাগুড়ি দিতে দিতেই সে যেন অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে।একঝাঁক তরুন মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আখড়ায় পরিনত হয়েছে আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই প্রতিবছর বাড়ছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রতিযোগিতার শতকরা হারও গত কয়েক বছর ধরে অনেক বেশি।

ক্রীড়াঙ্গনেও বেশ খ্যাতি কুঁড়িয়েছে অদম্য জবিয়ানরা।তবে ক্রীড়া চর্চার পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে চাপা পরে যাচ্ছে অনেক প্রতিভা। সম্প্রতি ২০১৯ সালে এস. এ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্নপদক জয়ী মারজান আক্তার (প্রিয়া) তেমনি একজন অদম্য জবিয়ান।আবাসন,যানবাহন ও ক্যান্টিন সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থীদের সাহস ও মনোবল সত্যিই বিস্মিয়কর। ব্যয়বহুল পুরান ঢাকার ঘিন্জি আর স্যাঁতসেঁতে মেসে কষ্টে দিন কাটানোর গোটা ক্যাম্পাসকে মাতিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে জবিয়নরা।এছাড়া অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক চাকুরীর বাজারেও বেশ ভাল করছে জবির শিক্ষার্থীরা।বিসিএস ও অন্য চাকরিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্স্থান চোখে পড়ার মত।এমনকি ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে গোপন বারকোড পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে  জালিয়াতি রোধ করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদর্শে পরিনত হয় জবি।

প্রতিষ্ঠার কাল থেকেই নানারকম প্রতিকূলতা কাটিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জানান দিতে নিরলস পরিশ্রম করেছে জবিয়ানরা ও এর সম্মানিত  শিক্ষকগগণ।ইউজিসি প্রতিবেদনে এ' গ্রেডভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছে জবি।আর সবচেয়ে বড় আশার বাণী হলো আসছে "১৫ তম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস" উপলক্ষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একমাত্র ছাত্রীহল"বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল"।আর এরই মধ্য দিয়ে একমাত্র অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা মুক্ত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে জবি।


লেখক :মারিয়া অনি