দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর উপজেলার হিলি অঞ্চলে সরিষা ক্ষেতের পাশে বসানো বাক্স থেকে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত মৌসুমে সরিষার ফুলে মৌমাছিদের আনাগোনা বেড়ে যায়, যা মৌয়ালদের জন্য মধু সংগ্রহের আদর্শ সময়। স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সরিষা চাষ ও মধু উৎপাদনের এই উদ্যোগ চাষিদের আর্থিকভাবে লাভবান করার পাশাপাশি সরিষার ফলন বাড়াতেও সাহায্য করছে।
মৌয়ালরা জানান, সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় মোম দিয়ে তৈরি বাক্সে রানি মৌমাছি রেখে বাক্সে মৌমাছির দল আকৃষ্ট করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌমাছিরা সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রতি বাক্স থেকে দিনে প্রায় ৭ থেকে ৮ কেজি মধু সংগ্রহ করছেন, যা স্থানীয় বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে আসা মৌয়াল আনোয়ার হোসেন বলেন, সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য বিশেষ কাঠের বাক্স ব্যবহার করা হয়, যার ভেতরে রানি মৌমাছি রাখা হয়। বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে রেখে কিছুদিন পর সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। তিনি আরও জানান, এই প্রক্রিয়ায় এক মৌসুমে মধু সংগ্রহ করে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
স্থানীয় শিক্ষক শ্যামল উড়াও সরিষা ক্ষেত থেকে সংগৃহীত মধু কিনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সরাসরি ক্ষেত থেকে খাঁটি মধু পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। মধুর স্বাদ এবং মৌমাছিদের কাজ দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। অন্যদিকে, মোটরসাইকেল আরোহী সাইদুল ইসলাম জানান, মধু সংগ্রহের পদ্ধতি দেখে তিনি নিজেও এক কেজি মধু কিনেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ আরজেনা বেগম বলেন, চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় ২৬৪২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। মৌচাষের কারণে সরিষার ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, মৌমাছির উপস্থিতি সরিষার পরাগায়নে সাহায্য করে, যা ফলন ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
মৌয়াল সোহাগ সরকার জানান, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। তবে বছরের বাকি সময়ে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পোষার ব্যবস্থা করতে হয়। তিনি বলেন, সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা মধুতে যে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে, তা বাজারের অন্য মধু থেকে আলাদা।
সরিষা চাষিরাও এই কার্যক্রমে উপকৃত হচ্ছেন। সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌমাছি পালন করায় সরিষার ফলন বাড়ছে এবং কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। এই চাষ পদ্ধতি মৌচাষিদের পাশাপাশি চাষিদের জন্যও উপকারী।
সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালদের এমন উদ্যোগে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট। একদিকে মৌমাছির সাহায্যে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে মধু বিক্রি করে মৌয়ালরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করছেন। সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে এই উদ্যোগ এখন হিলি এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কর্মকাণ্ড হয়ে উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।