নিরাপদে আওয়ামীলীগের যে সকল এমপিরা পালিয়ে গিয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
নিরাপদে আওয়ামীলীগের যে সকল এমপিরা পালিয়ে গিয়েছেন

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক মোড়ে পৌঁছেছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ বেশ কয়েকজন নেতার বিদেশে পালানোর ঘটনা ঘটেছে।


এর আগে, ৫ আগস্টের পর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ অন্যান্যরা দেশ ত্যাগ করেন। এই নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।


এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, সরকার পতনের পরও কীভাবে এসব নেতারা দেশে থেকে পালাতে সক্ষম হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের দেশ ছাড়ার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে, যদিও তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


শেখ হাসিনার আত্মীয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহও আন্দোলনের সময় ভারতে চলে যান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ৩ আগস্ট রাতে পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। এর আগে, তাঁর ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলেও তিনি এখনও দেশে রয়েছেন।


এছাড়াও, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও আন্দোলনের সময় সপরিবারে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।


এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আরও যেসব নেতার দেশত্যাগের খবর পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র), সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ (জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ) ও শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল), দলের দপ্তর সম্পাদক ও শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও কার্যনির্বাহী সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। এ ছাড়া সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তাঁর মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার এবং ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীও দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।


এই তালিকায় আরও রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন (নিখিল), ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির (শয়ন), ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী প্রমুখ।


এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মোট ৩০ জন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, যার মধ্যে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদও রয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক উদ্বেগের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের এই দেশত্যাগের প্রবণতা দেশের জন্য এক নতুন সংকেত।


এই পরিস্থিতি সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা আগামী সময়ে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।