“সন্ত্রাসী সাঈদ ও তার সহযোগিদের নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে হয় আমাদের বাঁচান, নতুবা আমাদের অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিন। আমরা আর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ও তার সহযোগিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে চাইনা”। কথাগুলো বলছিলেন, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের থানেশ্বরকাঠী গ্রামের নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর সদররোডে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্ত মনা লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও শিক্ষকবৃন্দরা।
মুক্ত মনা লেখক কাজল রায়ের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক উম্মেশ রায়, অধ্যাপক মিজানুর রহমান সেলিম, অধ্যাপক দুলাল মজুমদার, ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী, সাংবাদিক সৈয়দ মেহিদী হাসান, এ্যাডভোকেট একে আজাদ, সাংবাদিক অপূর্ব অপু, লিটু দত্ত, ববি শিক্ষার্থী রাকিব প্রমুখ।
সরেজমিনে জানা গেছে, থানেশ্বরকাঠী গ্রামের দুইশতাধিক ও পাশ্ববর্তী মোহনকাঠী গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন শতাধিক পরিবার সন্ত্রাসী সাঈদ ও তার সহযোগিদের কাছে দীর্ঘদিন থেকে জিম্মি হয়ে পরেছেন।
এলাকায় মাদক ব্যবসা জমজমাট করতে কারণে অকারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ দুই গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের দীর্ঘদিন থেকে নির্যাতন করে আসছে সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ও তার সহযোগিরা।
মাদক ব্যবসা ও এলাকার নিরিহ ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে তার (সাঈদ) স্ত্রী গত পাঁচ বছর ধরে দু’সন্তান নিয়ে অন্যস্থানে বসবাস করছেন। সন্ত্রাসী আবু সাঈদের হাতে জিম্মি পরিবারের সদস্যরা নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি করেছেন।
স্থানীয় মৎস্যজীবি দীপঙ্কর হালদারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনের শিকার শত শত নারী-পুরুষরা বলেন, কারনে-অকারণে সন্ত্রাসী সাঈদ ও তার সহযোগিদের হাতে তাদের হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফরহাদ তালুকদার ও রত্নপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর আশ্রাফ আলীর উপস্থিতিতে নির্যাতনের শিকার দীপঙ্কর হালদার, মঞ্জু জয়ধর, বিধবা জীবনী মল্লিক, গৃহবধু রসনা সরকার, সরিকা মল্লিক, দুলি রানী হালদার, সত্য রঞ্জন হালদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনীল হালদার, বুদ্ধিশ^র সরকার, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অবনী সরকারসহ গ্রামের ভূক্তভোগী কয়েকশ’ নারী-পুরুষ সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ও তার সহযোগিদের নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের বর্ননা করেন।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, থানেশ^রকাঠী গ্রামের মৃত শাহজাহান হাওলাদারের পুত্র সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ১০/১২ জন সহযোগিদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে গ্রামের মধ্যে মাদকের রমরমা ব্যবসা করে আসছে। তারা গ্রামের নারীদের সম্ভ্রমহানী থেকে শুরু করে প্রতিনিয়িত যৌণ হয়রানী করে আসছে।
সন্ত্রাসী সাঈদ তার সহযোগিদের নিয়ে প্রায়ই একটি শর্টগান ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতির সৃষ্টি করছে। স্থানীয় শাহ আলম তালুকদারের বাড়িতে প্রায় রাতেই সাঈদ তার সহযোগিদের নিয়ে মাদক সেবনের আসর বসিয়ে নারী নিয়ে ফুর্তিতে মেতে ওঠে।
সূত্রমতে, সাঈদ একবার র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছিলো। দীর্ঘদিন পূর্বে আবু সাঈদ যুবলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও তার সহযোগিরা সবাই বিএনপির একসময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডার। গ্রামবাসীদের মধ্যে যারাই সাঈদের মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করেছেন তারাই হামলার শিকার হয়েছেন।
৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর ইসলাম চৌধুরী বলেন, গ্রামের সবাই সন্ত্রাসী আবু সাঈদের হাতে জিম্মি। মাদক সেবনে বাঁধা দেওয়ায় সাঈদ আমার দুই পা কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিশু থেকে ছাত্র এমনকি ৬০/৭০ বছর বয়সের গ্রামের অধিকাংশরাই সন্ত্রাসী সাঈদের হামলার শিকার হয়েছে।
রত্নপুুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর আশ্রাফ আলী বলেন, আবু সাঈদ একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা।
সূত্রমতে, সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে মোহনকাঠী গ্রামের বিনোদ বিশ্বসের পুত্র মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যুবক ইজিবাইক চালক বিপুল সরকারকে (৩০) প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে সাঈদ ও তার সহযোগিরা। এসময় ছিনিয়ে নেয়া হয় বিপুলের সাথে থাকা নগদ অর্থ ও ইজিবাইক।
গত ৫ আগস্ট থানেশ^রকাঠী গ্রামের সুশান্ত বৈদ্যর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুত্বর আহত করে সাঈদ। বিপুল ও সুশান্ত বর্তমানে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সূত্রমতে, সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ও তার সহযোগিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে হামলার ঘটনায় বিপুলের দাদা ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অবনী সরকার বাদি হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় আবু সাঈদসহ তার সহযোগিদের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে থানার ওসি মোঃ গোলাম ছরোয়ার বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।
অভিযুক্ত আবু সাঈদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে (০১৯২০ .... ৮২) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তার (সাঈদ) বৃদ্ধ মা আমবিয়া বেগম (৬৫) বলেন, আমার ছেলেকে মাদক ব্যবসায় নামিয়ে খারাপ করেছে মীর আশ্রাফ আলী। এখন তার কথা না শোনায় তিনি সাঈদের বিরুদ্ধে তার লোকজন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।