ভয়ের রাজত্ব তৈরির ষড়যন্ত্র: জঙ্গি নাটক মামলায় শহীদুল গ্রেপ্তার

২০১৬ সালের কল্যাণপুর জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি সাজিয়ে ৯ জনকে হত্যার মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হকসহ তিন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে হাজির করা হয় সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক ডিসি মো. জসীম উদ্দীন মোল্লাকে। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণের পাশাপাশি মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ৭ মে নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে ৯ তরুণকে আটকিয়ে জঙ্গি সাজিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল।

তিনি জানান, ট্রাইব্যুনালের তদন্তে উঠে এসেছে, হত্যাকাণ্ডের আগে বিভিন্ন স্থান থেকে এই তরুণদের মাসাধিককাল আটক রাখা হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে তাদের জাহাজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্লক রেইডের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে এটি জঙ্গি হামলা হিসেবে প্রচার করা হয়।

২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন জাহাজ বাড়িতে 'জঙ্গি আস্তানা' অভিযানের নামে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। ঘটনাস্থলে তৎকালীন আইজিপি শহীদুল হক নিহতদের জেএমবি সদস্য ও গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করেছিলেন।

প্রসিকিউশন দাবি করে, জঙ্গি দমনের নামে এ ধরনের নাটকীয় হত্যাকাণ্ড তখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইসলামিক ভাবধারার মানুষদের টার্গেট করে জঙ্গি তকমা দিয়ে হত্যা করা হতো। আদালতে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, হত্যার শিকার ৯ তরুণের মধ্যে কয়েকজনকে ডিবি হেফাজতে দীর্ঘদিন আটক রাখা হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে তাদের জঙ্গি সাজিয়ে হত্যা করা হয়। প্রসিকিউশন বলছে, এটি ছিল তৎকালীন সরকারকে রক্ষার একটি কৌশল।

আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলার রায় নজির সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ মে হওয়ার কথা রয়েছে।