রমজান মাস মুসলমানদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। রোজা শব্দের আরবি প্রতিশব্দ ‘সাওম’, যার অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো’’ (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)। এই মাসকে গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’’ (বুখারী ও মুসলিম)।
রমজান মাসে নফল ইবাদতের মর্যাদা অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান এবং এক ফরজ ইবাদতের প্রতিদান অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমতুল্য। রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজেই প্রদান করবেন এবং অন্য সব ইবাদতের চেয়ে বেশি প্রতিদান দান করবেন। এ সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, ‘‘মানুষের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু রোজার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, এটি শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব’’ (মুসলিম)।
রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং শয়তানকে বন্দি রাখা হয় (বুখারী ও মুসলিম)। এটি আত্মশুদ্ধির মাস, যেখানে ধৈর্য ও সহনশীলতা বাড়ে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দুর্গ’’ (আহমাদ)। এছাড়া ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখেন’’ (মুসলিম)।
এ মাসে দোয়া কবুল হয়, প্রতিদিন বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। ইফতারের সময় দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয় এবং রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধযুক্ত বলে গণ্য হয় (বুখারী ও মুসলিম)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
রোজা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম। কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য ‘রাইয়ান’ নামক দরজা খুলে দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে (বুখারী ও মুসলিম)। কুরআন ও রোজা কিয়ামতের দিন মুমিনদের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য সুপারিশ কবুল করা হবে (আহমাদ)।
রমজান মাসে রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করা গেলে, তা পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করবে। যে ব্যক্তি বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করে, সে যদি সারা জীবনও রোজা রাখে, তবুও তার পাপের খেসারত হবে না (বুখারী)। সুতরাং, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।