কুমিল্লার দেবীদ্বারে ৭দিন ধরে পানিবন্দি বিধবা ঝরনা বেগমের ঘরে নেই খাবার, বড় কষ্টে জীবন যাপন করছেন তিনি। কাছাকাছি কোন আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় দূরের আশ্রয় কেন্দ্রে পানি ভেঙ্গে যেতেও পারছেননা তিনি। তাছাড়া রাতে চোর ডাকাতের হাতে সর্বস্ব হানানোর ভয়ও তাড়া করছে তাকে। অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও এবং সরকারি সহায়তা আসলেও দূর্গম এলাকায় কেউ সাহায্য নিয়ে আসেনা। আমাদের এলাকায় কারোর ঘরেই রান্না করার কোন সুযোগ বা বিশুদ্ধ পানি পানেরও কোন ব্যবস্থা নেই। সাহায্যকারীরা সবাই আশ্রয় কেন্দ্র ও সড়কের পাশের লোকদের ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে চলে যায়।
শুক্রবার (৩০ আগষ্ট) সরজমিনে বানভাসি মানুষের জীবন ধারণের অবস্থার খবর জানতে গেলে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলেন ৪নং সুবিল ইউনিয়নের উত্তর রাঘবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির মৃত: মিন্নত আলীর বিধবা স্ত্রী ঝরনা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর রাঘবপুর গ্রামে পিত্রালয়ে আশ্রিত তিনি।
অপরদিকে দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামের মতিন মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রী মো. ফারুক মিয়া জানান, পরিবারের সদস্যরা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবারের উপর জীবন বেঁচে আছে। সরকারি বা বে-সরকারি কোন সহযোগীতা এখনো পাইনি। পানিবন্দি দূর্গম এলাকা হওয়ায় খাদ্য সামগ্রী না পাওয়া সুবিল ইউনিয়নের উত্তর এবং দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামের এমন পরিস্থিতিতে আছেন অন্তত: পাঁচশত পরিবার।
উল্লেখ্য, গত ২২ আগষ্ট রাতে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবাহিত হয়। নদীর বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে প্লাবিত হয় দেবীদ্বার উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ফতেহাবাদ, সুবিল, রসূলপুর, ইউছুফপুর এবং বড়শালঘর ইউনিয়নের অন্তত প্রায় অর্ধশত গ্রাম। এ ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ফতেহাবাদ এবং সুবিল ইউনিয়নের মানুষজন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ এলাকার পানিবন্দি মানুষজনের বাড়িঘর, অধিকাংশ রাস্তা ঘাট, জমির ফসল, মাছের খামার, গবাদী পশু, হাঁস-মুরগীর খামারের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। দিনব্যপী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বানভাসী এলাকায় ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বন্যায় পানিবন্দি মানুষজনের এমন করুণ অবস্থা দেখা যায়।
এবিষয়ে সুবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম সারওয়ার মুকুল ভূঁইয়া বলেন, আমি ইউপি মেম্বারদের তালিকায় দূর্গত এলাকার প্রতিটি গ্রামের মানুষজনের খোঁজ খবর নিয়ে বরাদ্ধ পাওয়া সরকারি চাউল ঘরে ঘরে বিতরণ করে আসছি। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন, তাদের সকাল, দুপুর ও রাতের রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা রেখেছি। ৭ নং ওয়ার্ড সুবিল গ্রামে ৬৩ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজী করে চাউল বিতরণ করেছি এবং শুক্রবার (৩০আগস্ট) বিকেল থেকে ইউনিয়নের ৮নং উত্তর রাঘবপুরের ৯৮ পরিবার ও ৯ নং দক্ষিণ রাঘবপুরের ৬০ পরিবারকে ১০ কেজী করে চাউল দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দূর্গতদের মাঝে সরকারি চাউল বিতরণ করছি। এছাড়াও কোথাও কারোর সমস্যা শুনামাত্র প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। সরকারি চাউল ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা কর্তৃক ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে অধিকাংশ জায়গায় আমি নিজেই উপস্থিত থেকে তা বিতরণ করে আসছি। তবে আপনাদের কাছে যদি বন্যাদুর্গত কেউ ত্রাণ না পাওয়ার তথ্য থেকে থাকে তা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন, আমরা খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যাবস্থা করবো।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।