সুনামগঞ্জে খাবার ও পানি সংকটে বানভাসিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে জুন ২০২২ ০৯:২৪ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জে খাবার ও পানি সংকটে বানভাসিরা

হাওরবেষ্টিত ভাটির জনপদ ও পর্যটন এলাকা খ্যাত সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সোমবার (২০ জুন) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট। শহরের কোথাও পানি ব্যতিত তিল ধারণের কোন জায়গা নেই। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিতদের উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনীর একটি দল।


সোমবার বিমানবাহিনীর একটি ক্রুজ হেলিকপ্টার সুনামগঞ্জে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য আসার কথা রয়েছে।


এদিন পানি কিছুটা কমলেও এখনো চার থেকে ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে সুনামগঞ্জ শহর। দোকানপাট, অফিস-আদালত, সব জায়গায় পানি আর পানি। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। স্কুল-কলেজ, মসজিদ, অফিস-আদালত, বাড়ির ছাদ, উঁচু সেতুসহ শহরের বহুতল ভবনগুলোতে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কোনো কোনো স্থানে এক ঘরে ২০ থেকে ৩০ জন মানুষকে আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে।


শহরের নতুন পাড়ার একটি বহুতল ভবন তালুকদার হাউজের মালিক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় হারিয়ে অনেক প্রতিবেশী এসেছেন আমাদের এখানে। এভাবে হাঠাৎ করে বিপদ আসবে, এটা সুনামগঞ্জবাসী কোনদিন কল্পনাও করেনি।’


সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি সেলিম আহমদ বলেন, কয়েক ঘণ্টায় শহরে এমন পানি উঠবে, লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে হবে এটা কেউ ভাবতেই পারেনি। শহরের বহুতল ভবনগুলোতে অতিরিক্ত মানুষ থাকায় ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছেন অনেকেই। খাবার আর বিশুদ্ধ পানির সংকট তো রয়েছেই। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী শহরের বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছি।


বন্যার পানির কারণে গত তিন দিন ধরে সারা দেশের সাথে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেই সাথে নেই বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও বন্ধ। রাস্তাঘাট, বানভাসী মানুষের বাড়িঘরে কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও বুকসমান পানি।


এদিকে জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশায় বন্যা পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত মানুষজন গবাদিপশু নিয়েও পড়েছেন বিপাকে।

আশ্রয়কেন্দ্রে নিজেদের সাথে রাখতে হচ্ছে গৃহপালিত পশু। এসব উপজেলার অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে পরিবার পরিজন ও আসবাবপত্র নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে।


তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানিয়েছেন, উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল এ তিনটি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, আমি ও স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিতদের রান্না করা খাবার পৌছে দিচ্ছি দিনে ও রাতে।


গত দুদিন আগে সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়া, হাসননগর, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, ময়নার পয়েন্ট, বক পয়েন্টে কোমর থেকে বুকসমান পানি ছিল। এখন পানি কিছুটা কমেছে। এসব এলাকার মানুষজন এখন জরুরি প্রয়োজনে নৌকায় চলাচল করছেন। পানিবন্দি লোকজন জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক নেই। আত্মীয় স্বজন কে কোথায় কোন অবস্থায় আছে কিছুই জানা যাচ্ছে না। সুনামগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। রাত নামলেই যেন এক ভূতুরে শহরে পরিণত হয় শহরে।


প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল : সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধরমপাশা উপজেলার বানভাসি অনেকেই বলেছেন, তাঁরা এখনো কোন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাননি। কোনোরকমে খেয়ে না-খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে বেঁচে আছেন। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সেই সাথে বন্যা কবলিত এলাকায় সেনিটেশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে পানিতেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে বানভাসিদের।


মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জেলার কতগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে তা জানা যায়নি।


জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, জেলায় ২৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বন্যার কারণে সবগুলো বিদ্যালয়েই পাঠদান বন্ধ রয়েছে।


কল রিসিভ না করায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে কতো মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং নদনদীর পানি বিপদসীমার কোন অবস্থায় রয়েছে জানা যায়নি।


জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা সদরসহ সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ৪৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রসহ জেলার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫০ টন জিআর চাল ও নগদ ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।