বরিশাল শহরের উপকন্ঠে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন। নগরী থেকে যেখানে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৫/২০ মিনিট। কিন্তু উপজেলার লামচরি গ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি (প্রায় ৬ কিলোমিটার) এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে কীর্তনখোলা নদীর পানির তীব্র আঘাতে লামচরি গ্রামের এ সড়কটি সহ একাধিক বাড়ি-ঘর নদীতে বিলিন হয়ে যায়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা সড়কটি মেরামত করলেও স্থায়ী বা মজবুত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ সারা দেশে উন্নয়ন হলেও সদর উপজেলার চরবাড়িয়ার লামচরি এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে না প্রায় এক যুগ ধরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা বলেন, নির্বাচন এলেই চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নানান আশার বানী শোনান। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর আর কেউ এগিয়ে আসেন না। তারা জানান, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ভ্যান, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মটরসাইকেলের মাধ্যমে চলাচল করে। চরবাড়িয়া থেকে শুরু করে লামচরি পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছে গেছে। ভাঙ্গা সড়কে যানবাহনের ভেতরে বসে থাকাটা যেমন দায়, তেমনি আবার শুকনো মৌসুমে ধুলো, আর বর্ষায় গর্তে জমে থাকা কাদাপানিতে সড়ক দিয়ে হাঁটাচলাও মুশকিল। পাশাপাশি ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনাও। বর্তমানে কোনো যানবাহন তো দূরের কথা মানুষ পায়ে হেটেও চলাচল করতে পারে না। অনেক সময় রাস্তায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় সপ্তাখানেক ধরে লঘুচাপের কারনে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামচরি গ্রামের নিন্মাঞ্চলসহ এ সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মাওঃ সাঈদ বলেন, গ্রামের কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভ্যান গাড়ী অথবা এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে নিতে সে পথে বসেই মারা যায়। এরকমের একাধিক ঘটনা রয়েছে। তিনি বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগীকে যদি দ্রুত হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে ভোগান্তির শেষ নেই। সড়কের এ বেহাল অবস্থার কারণে এ্যাম্বুলেন্সতো আসেই না, এমনকি রিক্সা, অটো বা মাহিন্দ্রা চালকদের হাতে-পায়ে ধরে আনতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন পূর্বে একটি মাহিন্দ্রা কয়েকটি চালের বস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের মুদি মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার মধ্যে খাদায় পড়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মাহিন্দ্রাটি সড়কে টেনে তোলা হয়। ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল চালক কবির জানান, বর্ষার পুরো মৌসুমে মটরসাইকেল, ট্রলি বা কোনো যানবাহন মালামাল নিয়ে এখান থেকে যেতে পারছেন না। তবুও খুব কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে দিন খেটে খাওয়া হাজারও মানুষের। ওই গ্রামের বাসিন্দা মোকছেদা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “ রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে আমার মেয়ের ডেলিভারির জন্য পানির মধ্যে কোলে করে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এখানে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
স্থানীয় গণ্যমান্য বাক্তিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছেনা জনপ্রতিনিধিরা। উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগার কারনে লামচরিবাসী পিছিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন তারা। অবহেলিত এলাকাটিতে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উচ্চবিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিখ্যাত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বাসভবন। তারা জানেন না আর কতদিন এই ভোগান্তি পোহাতে হবে তাদের।
উল্লেখ্য, লামচরী প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক কয়েক বছর আগে কীর্তনখোলা নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই এলাকায় দুটি ইটভাটার মালিকদের নিজ অর্থায়নে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় সাবেক সড়কের পাশ দিয়ে আরেকটি সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয় চলাচল করার জন্য। কিন্ত বর্তমানে সেটাও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেলেও পানির স্রোতে রাস্তার ইটবালু ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরে সড়কটি।
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ মাহতাব হোসেন সুরুজ বলেন, এই রাস্তাটি বেহাল অবস্থা সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব শিগরই সড়কটির কাজ হবে বলে আশা করেন তিনি। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, তালতলী থেকে লামচরী সড়কের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।