সমকামী জিন বা ‘গে জিন’ এর অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সমকামিতার জন্য দায়ী। প্রায় ৫০ লাখ নারী ও পুরুষকে এ গবেষণা কাজে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে বলা হয়, জিন সরাসরি সমকামিতার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে না বরং সামাজিক অথবা পরিবৈশিক পরিস্থিতি বড় ভূমিকা পালন করে। জিন দ্বারা কোনো মানুষের এ ধরনের যৌন আচরণ বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব বলে গবেষণায় উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জিন গবেষক বেনজামিন নেইল বলেন, আমি আশা করি বিজ্ঞান মানুষকে সাধারণ ও প্রাকৃতিক যৌন আচরণ বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার কাজে ব্যবহৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং আরো কিছু সংস্থার অর্থায়নে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
গবেষকরা সমকামী নারী ও পুরুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যে অনেক পার্থক্য খুঁজে পান বলে জানান। তারা জানান, সমকামিতায় অভ্যস্তদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও মানসিক কিছু সংকট দেখা গেছে। অবসাদ, সামাজিক চাপ এসবও কাজ করে থাকে অনেক ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার জার্নাল সায়েন্সে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ গবেষণায় সমকামীদের সংস্থা এলজিবিটি'র অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারা এ গবেষণা ফলাফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে বলবে বিজ্ঞানকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিকভাবে সমকামীরা আরো নাজুক অবস্থায় পড়তে পারেন বলেও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ফিনল্যান্ডের মলিকিউলার মেডিসিন, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের জিনতত্ত্ববিদরা বলেছেন, সমকামিতা এবং জিনের মধ্যে সম্পর্ক নেই। ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) পরীক্ষার ফলাফলে তেমন চাঞ্চল্যকর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ তাদের স্বভাবজাত কারণে সমকামী হয়ে থাকে। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের অ্যানালিটিক্যাল ও ট্রান্সলেশনাল জেনেটিক ইউনিটের গবেষক আন্দ্রে গান্না জানিয়েছেন, যে জিনকে সমকামী বলে হইচই হয়েছে, সেটি তার নির্ধারিত মাপের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি বড় এবং ছোট ছোট নানা জিনের সমষ্টি। অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ড ইউনিভার্সিটির জিনতত্ত্ববিদ ব্র্যান্ডেন জিৎস বলেছেন, একক সমকামী জিনের অস্তিত্ব নেই। পাঁচ রকম জেনেটিক ভ্যারিয়েশন দেখা গেছে যেখানে সমলিঙ্গে যৌন আকর্ষণের সম্পর্ক রয়েছে।
সমকামিতা এবং জিনের সম্পর্ক নিয়ে প্রথম পরীক্ষা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। ১৯৯৩ সালে আমেরিকার জিনতাত্ত্বিক ডিন হ্যামার কয়েকটি পরিবারের সমকামী পুরুষদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দাবি করেন, সমকামিতা ‘এক্স ক্রোমোজোমের’ তারতম্যের কারণে হয়। আমাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার অধিকাংশই জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে কিছু জিনের মুখ্য ভূমিকা থাকে যাদের বলে মার্কার (নির্দেশক)। গবেষকরা দাবি করেন, সমকামী পুরুষদের ১৩ এবং ১৪ নম্বর ক্রোমোজোমের মধ্যে ওই মার্কার জিনের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। ওই জিনই সমকামিতার জন্য দায়ী। ওই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই তর্ক-বিতর্ক শুরু হয় বিজ্ঞানীমহলে। ব্রিটিশ জিনতাত্ত্বিকরা দাবি করেন, আরো অনেক, আরো বিশদে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই কোনও জিনকে ‘গে জিন’ বলে চিহ্নিত করা সম্ভব। পুরুষদের ক্ষেত্রে যে জিনকে দায়ী করা হয়েছে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পৃথক হতেই পারে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্ট্যাটিস্টিকাল জেনেটিক্সের অধ্যাপক গিল ম্যাকভানের কথায়, যৌনতা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশ, অভিজ্ঞতা, সহজাত প্রবৃত্তি এবং কোনও ক্ষেত্রে শারীরিক গঠনের তারতম্যের কারণেও এর পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।