প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪১
ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জাভা প্রদেশে একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল ধসে পড়ে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, নিহতদের বেশিরভাগই কিশোর বয়সী ছাত্র যারা ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছে প্রদেশের সিদোয়ারজো শহরের আল খোজিনি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলে।
গত সপ্তাহে এই স্কুলে আকস্মিকভাবে ভবনের উপরের অংশ ধসে পড়লে মুহূর্তেই শতাধিক শিক্ষার্থী ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে যায়। রাতভর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে উদ্ধারকর্মীরা খননযন্ত্রের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ সরাতে থাকেন। উদ্ধার সংস্থার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কমলা রঙের মরদেহ বহনের ব্যাগে মৃতদেহগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং আশপাশের এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের প্রায় ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে সরানো হয়েছে। তবে এখনো নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধারকাজ সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, স্কুল ভবনের ওপরের তলায় নির্মাণকাজ চলছিল। এর ফলে মূল কাঠামোর ফাউন্ডেশনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং পুরো ভবনটি একসঙ্গে ধসে পড়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, নির্মাণকাজে নিরাপত্তা মান বজায় রাখা হয়নি এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত তলা নির্মাণ শুরু হয়েছিল।
দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৪২ হাজার ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৫০টি স্কুলের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ অনুমোদন রয়েছে। ফলে বেশিরভাগ স্কুলেই ভবন নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণের ত্রুটি রয়ে গেছে, যা এই ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
ইন্দোনেশিয়ার গণপূর্তমন্ত্রী ডোডি হ্যাংগোডো বলেন, সরকার এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং অনুমোদনবিহীন ইসলামিক স্কুলগুলোর কাঠামোগত নিরাপত্তা যাচাই করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রয়োজনে এসব স্কুল অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, ধসে পড়া আল খোজিনি স্কুলের নির্মাণ অনুমতি ছিল কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় অতীতে এমন নির্মাণ দুর্ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে, যা দেশটির ভবন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক তদারকি এবং অনুমোদনবিহীন নির্মাণ বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।