প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৩
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর আবারও নির্যাতন শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে। এবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আরাকান আর্মি নির্যাতনে জড়িত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাজারো রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ড্রোন ও আর্টিলারি হামলায় শতাধিক নিহত হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাত বাড়তে থাকায় রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা গুরুতরভাবে হুমকির মুখে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ৪০৯টি বিমান হামলা এবং ২৭৪টি আর্টিলারি হামলার তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৭৪ বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পশ্চিমা সামরিক কমান্ড আরাকান আর্মির দখলে আসে। এই অবস্থায় রাখাইনে সংঘাত এবং নাগরিক হতাহতের ঘটনা বাড়তে থাকে। ৫ আগস্ট মংডু শহরের পশ্চিমে নাফ নদীর তীরে হাজারো রোহিঙ্গা নিরাপত্তা খোঁজে জড়ো হয়, কিন্তু ড্রোন ও আর্টিলারি হামলায় শতাধিক নিহত হয়। নৌকায় পালানোর চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদেরও হামলার শিকার হতে হয়, যার ফলে শিশু ও বেসামরিক সহ অনেকেই মারা যায়।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ১০০ জন নিহত হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। রাজনৈতিক কারণে ২৯ হাজার ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনও সামরিক নিয়ন্ত্রিত আদালতের মাধ্যমে আটক।
সংঘাতের কারণে রাখাইনে লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বেসামরিক মানুষ এবং সুরক্ষিত স্থানে হামলা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, গ্রেপ্তার, অগ্নিসংযোগ এবং মানবিক সহায়তা অস্বীকারের মতো নৃশংসতা অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মি প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এতে বেসামরিক জনগণের দুর্ভোগের চক্র অব্যাহত রয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং দায়মুক্তি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রস্তাব করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ১৪ মাসে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় কমপক্ষে ৮৩৮ জন নিহত হয়। এ সময় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১১। নতুন ধরনের হামলার মধ্যে রয়েছে বিস্ফোরক ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার এবং নীচ দিয়ে উড়তে সক্ষম কৌশলগত বিমানের ব্যবহার, যা বেসামরিক স্থানে গোলাবারুদ হামলার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।