প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৮
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রাতের আঁধারে অভিবাসন-বিরোধী একটি বড়সড় অভিযান চালানো হয়েছে। দেশটির অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা “অপস বেলাঞ্জা” নামে পরিচিত এ অভিযানে মোট ৭৭০ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করেন। অভিযানটি মূলত বুকিত বিনতাং এলাকায় কেন্দ্রীভূত ছিল, যা নাইটলাইফ এবং পর্যটকসহ শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন বাংলাদেশি। এছাড়া মিয়ানমার, নেপাল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছে। অভিযানের সময় অনেকে টেবিলের নিচে লুকিয়ে, দোকানের ভেতরে আশ্রয় নিয়ে কিংবা ছাদে উঠে পালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন।
অভিযানটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হয়। পুত্রজায়া থেকে অভিবাসন বিভাগের ১০৬ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন এবং অভিযান পরিচালনার নেতৃত্ব দেন পরিচালক বাসরি ওসমান। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে পুরো বুকিত বিনতাং এলাকা লকডাউন জোনে পরিণত করা হয় এবং তিন ব্লকের প্রতিটি প্রবেশ ও প্রস্থানপথ ঘিরে তল্লাশি পরিচালনা করা হয়।
মোট ২ হাজার ৪৪৫ জনকে তল্লাশি করা হয়, যার মধ্যে ১ হাজার ৬০০ জন বিদেশি এবং ৮৪৫ জন স্থানীয়। আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৯৬ জন, যার মধ্যে ৩৯৪ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। এছাড়া মিয়ানমার থেকে ২৩৫ জন, নেপাল ৭২ জন, ভারত ৫৮ জন, ইন্দোনেশিয়া ১৯ জন এবং অন্যান্য দেশ থেকে ৯ জন আটক হন।
বাসরি ওসমান জানান, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের প্রধান সমস্যা হলো মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা, বৈধ পরিচয়পত্রের অভাব এবং অনুমতি ছাড়া কাজ করা। মূলত দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে তারা মালয়েশিয়ায় নির্মাণ, বাগান বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে আসেন, যা স্থানীয়রা করতে অনীহা প্রকাশ করে।
অভিযানের সময় কর্মকর্তারা একটি গোপন জুয়ার আসরও খুঁজে পান, যেখানে অনলাইন জুয়া খেলার জন্য বিদেশিরা সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করছিল। এছাড়া কিছু দোকানও বিদেশিদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় অন্যান্য অভিবাসীরা সেখানে অবস্থান করত।
বাসরি ওসমান জানান, আটককৃতদের প্রথমে প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য পুত্রজায়ার অভিবাসন দপ্তরে নেওয়া হবে। এরপর তারা আটককেন্দ্রে পাঠানো হবে। তিনি আরও জানান, এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো হবে, যাতে কেবল অনুমোদিত কোটার মধ্যে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই অভিযান মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত অভিবাসীদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে পরিচালিত এই তল্লাশি অন্যান্য এলাকায় সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং অভিবাসন নীতি কার্যকর করতে সহায়তা করবে।