প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:২৯
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর ভারতীয় পোশাক ও টেক্সটাইল রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট, টার্গেট ও গ্যাপসহ বড় বড় মার্কিন রিটেইলাররা ভারত থেকে অর্ডার স্থগিত করার কথা জানিয়েছে। ভারতের রপ্তানিকারকরা এনডিটিভি প্রফিটকে জানিয়েছেন, মার্কিন ক্রেতারা ই-মেইল ও চিঠির মাধ্যমে পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্যের চালান আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাড়তি খরচ ক্রেতারা ভাগাভাগি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই বোঝা বহন করতে বলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রগামী ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি খরচ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এই কারণে মার্কিন ক্রেতাদের অর্ডার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। এই পরিস্থিতিতে ভারত অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ওয়েলস্পান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্ডো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্টের মতো বড় বড় রপ্তানিকারকদের পণ্য বিক্রির ৪০ থেকে ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক।
ভারতের পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার হিসেবে বিবেচিত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৩৬.৬১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির ২৮ শতাংশই মার্কিন বাজারে গিয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন শুল্কের কারণে ভারত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কাছে অর্ডার হারাতে পারে, যেখানে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এর ফলে ভারতের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ জরুরি। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য ও অপ্রাসঙ্গিক’ বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রথম অগ্রাধিকার।
২০২২ সালের ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপে সরবরাহের জটিলতার কারণে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে, যা তখন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেছিল বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য। বর্তমানে এই শুল্ক আরোপ পরিস্থিতি ভারতের রপ্তানি শিল্পে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের জন্যও বড় আঘাত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের পোশাক খাতের জন্য মার্কিন বাজারে শুল্ক বৃদ্ধি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দ্রুত সমাধানের জন্য কূটনৈতিক আলোচনা প্রয়োজন।