প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১৬:৩১
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়ে নজির গড়েছেন ৩৩ বছর বয়সী তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি। তিনি এই শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও অশ্বেতাঙ্গ প্রার্থী হিসেবে শীর্ষ পদে লড়ছেন। আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি জিতলে হবেন নিউইয়র্কের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। ইতোমধ্যেই তার সমাজভিত্তিক প্রচারণা ও মানবিক রাজনৈতিক এজেন্ডা ভোটারদের দৃষ্টি কেড়েছে।
জোহরান মামদানি একদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অপরদিকে মুসলিম এবং আফ্রিকান ভূমিতে বেড়ে ওঠা অভিবাসী সন্তান। সাত বছর বয়সে তিনি পরিবারসহ উগান্ডা থেকে নিউইয়র্কে আসেন। তার পিতা মাহমুদ মামদানি একজন খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং মা মিরা নায়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা। নাগরিকত্ব পাওয়ার মাত্র ছয় বছরের মাথায় নিউইয়র্ক সিটির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়াটা নিজেই একটি দৃষ্টান্ত।
রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বামঘেঁষা জোহরান দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের অধিকারকে সামনে রেখে তার কর্মসূচি সাজিয়েছেন। তিনি স্বল্পমূল্যের সরকারি মুদির দোকান, দুই লাখ ভাড়ানিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, চার বছর ভাড়া স্থগিত রাখা, বিনা খরচে শিশুদের ডে-কেয়ার এবং গণপরিবহনে বিনা ভাড়ার বাস চালুর ঘোষণা দিয়ে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিশেষ অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, এই কমিউনিটির নারীরা ঘরে ঘরে গিয়ে তার হয়ে প্রচার চালিয়েছেন, যা তাকে আবেগে ভাসিয়েছে। এমন আন্তরিক প্রচারণায় বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জোহরান।
নিউইয়র্কের একমাত্র বাংলাদেশি কাউন্সিলর শাহানা হানিফ তার পাশে থেকেছেন পুরো সময়। বাংলায় প্রচারিত ভিডিও বার্তায় তারা অভিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে একসঙ্গে ভোট চেয়েছেন। শাহানাও ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে পুনরায় কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেয়েছেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ঘটনা, তা হলো জোহরান সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর মতো প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে এই মনোনয়ন অর্জন করেছেন। এতে বোঝা যায়, আমেরিকান রাজনীতির মূল স্রোতে এখন তরুণ, অভিবাসী ও মুসলিমরা মাথা উঁচু করে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলছেন।
তিনি ধনীদের প্রতিনিধি নন, বরং সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর। তার প্রচারে অন্তর্ভুক্তির বার্তা ও সরলতা রাজনীতির ক্লান্ত জনতার মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে।
নিউইয়র্কের মতো বৈচিত্র্যময় শহরে জোহরান এখন এক নতুন রাজনৈতিক আইকন, যার প্রচারণা দক্ষিণ এশীয়সহ বহু সংস্কৃতির মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।