প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৯:৪৩
মধ্য ইসরায়েলের রেহোভোতে অবস্থিত ওয়েইজম্যান বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট সম্প্রতি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে। বহু বছর ধরে এটি ইসরায়েলের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সোমবার রাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ভবনে সরাসরি আঘাত লাগে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমপ্লেক্স আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এই হামলাকে ইরান তাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দাবি করেছে।
ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটে জীবনবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অণুজীববিজ্ঞানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চলে। এই গবেষণাগুলো সরাসরি ইসরায়েলের নজরদারি প্রযুক্তি, টার্গেটিং সিস্টেম এবং অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হয়, যা গাজা, লেবানন, ইয়েমেন এবং সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডেও কার্যকর করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটকে ‘ইসরায়েলের বৈজ্ঞানিক ও সামরিক মস্তিষ্ক’ হিসেবেও পরিচিত করা হয়।
ধ্বংসপ্রাপ্ত গবেষণাগারগুলোর মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক এলদাদ জাহোর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক অধ্যাপক এরান সেগাল। তাদের গবেষণাগারে থাকা মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি পানিতে এবং কাঠামোগত ক্ষতিতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এই গবেষণাগারগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নজরদারি অ্যালগরিদম উন্নয়নে কাজ করত।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি থেকে দেখা গেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ল্যাবের ভেতর ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামো, ধসে পড়া মেঝে এবং পুড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ছিল ইরানের অত্যন্ত নির্ভুল পরিকল্পিত হামলা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েলের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা ও সামরিক গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক ছদ্মবেশে পরিচালনার বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিশোধ।
গবেষকরা বলছেন, এই হামলার ফলে লাইফ সায়েন্সের গবেষণাগুলোতে ব্যবহৃত বহু বছর ধরে সংগ্রহকৃত উপাদান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যা পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে দুবছর সময় লাগবে। ইরানের এই হামলা একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে যে, ইসরায়েলের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সরাসরি যুদ্ধযন্ত্রে রূপান্তরিত হয়, তখন তাদের আর নিরীহ থাকা যায় না।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ও সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।