নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে যে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাই সেবা গ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে। সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, "এনআইডি সেবা গ্রহণকারী এসব প্রতিষ্ঠান অসতর্কভাবে ব্যক্তিগত তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে সরবরাহ করেছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।"
তদন্তের ফলস্বরূপ, অভিযুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হলো—স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং তাদের অসতর্কতা বা অনিচ্ছাকৃত তথ্য ফাঁসের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসময় কমিশন সচিব আরও বলেন, "এনআইডি যাচাই সেবা নেওয়া ১৮২টি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করছে, যা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।" তিনি এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, ২০২৩ সালের ৬ জুলাই একটি মার্কিন ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এই অভিযোগের পর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ দাবি করেছিল, তাদের এনআইডি সার্ভার সুরক্ষিত রয়েছে। তবে ইসি সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, কিছু প্রতিষ্ঠান এই তথ্য অসতর্কভাবে তৃতীয় পক্ষের কাছে সরবরাহ করেছে, যা সুরক্ষা নীতির লঙ্ঘন।
এনআইডি যাচাই সেবা নিয়ে এ ঘটনায় সর্বশেষ দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, একটি হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরও কড়া নিয়ম ও নজরদারি প্রয়োজন এবং অপরটি হচ্ছে, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে জনগণের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হওয়া। সরকার এই ইস্যুতে শিগগিরই একটি নতুন নীতি প্রণয়ন করতে পারে, যাতে তথ্য ফাঁসের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এছাড়া, জাতীয় পরিচয়পত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো বেশি নজরদারি ও সতর্কতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত রয়েছে। তথ্য ফাঁসের ঘটনা দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আসন্ন সময়ে ইসি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ধরনের তথ্য ফাঁসের ঘটনা রোধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।