মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (বার্থরাইট সিটিজেনশিপ) বন্ধ হতে যাচ্ছে। ২০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে নতুন এই আইন কার্যকর হলে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আর কোনো শিশু পাবে না, যদি তার বাবা-মা নাগরিক বা গ্রিন কার্ডধারী না হন। তবে আদালতের নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত ১৪ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক হলেও অভিবাসী সম্প্রদায়ে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ালের খবরে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বহু ভারতীয় দম্পতি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নিউ জার্সির চিকিৎসক ড. এস ডি রামা জানিয়েছেন, ৮-৯ মাসের গর্ভবতী নারীরা সিজারিয়ান ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি ৭ মাসের গর্ভবতী কয়েকজন নারীও আগেভাগে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের একমাত্র লক্ষ্য সন্তানের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা।
এ নিয়ে টেক্সাসের চিকিৎসক ড. এস জি মুখালা জানিয়েছেন, আগেভাগে সন্তান জন্ম দেওয়া মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে শিশুর ফুসফুস, ওজন এবং স্নায়ুর সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তারপরও অনেক অভিভাবক এই ঝুঁকি নিচ্ছেন। কারণ তাদের মতে, সন্তান নাগরিকত্ব পেলে পরিবারকে স্থায়িত্ব দেওয়া যাবে।
অনেক ভারতীয় অভিবাসী দীর্ঘদিন ধরে গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অনেকেই সন্তানকে নাগরিকত্বের একমাত্র উপায় হিসেবে দেখছেন। এক গর্ভবতী নারী বলেন, 'আমরা ছয় বছর ধরে গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় আছি। এই নতুন আইন আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।'
২০ ফেব্রুয়ারি আইন কার্যকর হওয়ার আগে সন্তান জন্ম দিয়ে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য দম্পতিরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচকেরা বলছেন, এই আইন অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক। আদালতের সাময়িক স্থগিতাদেশ পরিস্থিতি কিছুটা সহজ করলেও ভবিষ্যতে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল হলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বড় ধাক্কা আসবে। ভবিষ্যতে যারা স্থায়ী বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে আসেন, তাদের জন্য এটি আরও কঠিন বাস্তবতা তৈরি করবে।
অভিবাসন আইন এবং সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে অভিবাসীদের মধ্যে তৈরি হবে আরও অনিশ্চয়তা ও সামাজিক অস্থিরতা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।