দীর্ঘ ১৪ বছর গোপনে থাকার পর প্রকাশ্যে এলেন চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তিনটি মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এবং সাতটি মামলায় আসামি এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিজেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর শিকার দাবি করেছেন। তিনি আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন মেজর জিয়া। এরপর থেকে তার নাম জঙ্গি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। পুলিশ ও সরকারিভাবে তাকে 'মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলাসহ একাধিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সম্প্রতি মেজর জিয়া আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলা এবং 'মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আবেদনে তিনি বলেছেন, তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আরেক আবেদনে তিনি তার নামে ঘোষণা করা ২০ লাখ টাকার পুরস্কারও প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন।
মেজর জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন, তিনি নিজে মেজর জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সরোয়ার বলেন, "জিয়া আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন করে বলেছেন যে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলাই মিথ্যা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।"
২০১১ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করা মেজর জিয়া কোন দেশে আছেন তা নিশ্চিত করেননি। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, "ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যের বিরোধিতা করায় তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "পা চাটলে সঙ্গী, না চাটলে জঙ্গি—এই নীতিতে সরকার বিরোধীদের দমন করেছে। আমাকেও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।"
মেজর জিয়া তার বিরুদ্ধে একাধিক সময়ে আল কায়েদা, আনসার আল ইসলাম এবং আইএস-এর সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "যতবারই সরকারের প্রয়োজন হয়েছে, ততবারই আমাকে নতুন পরিচয়ে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।"
জুলহাজ-তনয় হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তার ফাঁসির দণ্ড হয়েছে। এসব মামলাকে তিনি উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে তার বিরুদ্ধে থাকা পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদনও করেছেন।
আইনজীবীর মাধ্যমে জানা যায়, মেজর জিয়া সরকারের কাছে তার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা ও অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য পুনরায় আবেদন করবেন।
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার এক আলোচিত নাম মেজর জিয়ার আত্মপ্রকাশ ও মামলা প্রত্যাহারের আবেদন ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।