দিন যত যাচ্ছে ততই উন্নতি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের। এখন জটিল থেকে জটিলতর অস্ত্রোপচার হচ্ছে খুব সহজেই। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে মায়ের গর্ভেই অনাগত শিশুর মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসকরা।
ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের এক হাসপাতালে। মায়ের গর্ভে শিশুর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের ঘটনা এটিই বিশ্বে প্রথম।
জানা গেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, মায়ের গর্ভে থাকা ওই শিশুর মস্তিষ্কের রক্তনালীতে সমস্যা রয়েছে। মস্তিষ্কের এই সমস্যাকে বলে ‘ভেনাস অব গ্যালেন ম্যালফরমেশন’। মস্তিষ্ক থেকে যেসব রক্তনালী হৃৎপিণ্ডে রক্ত পৌঁছে দেয়, সেগুলো সঠিকভাবে গঠিত না হলে এই সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে রক্তনালী এবং হৃৎপিণ্ডে চাপ পড়ে, যা একাধিক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
বোস্টনের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডারেন অরবাক জানিয়েছেন, এই শারীরিক অবস্থার ক্ষেত্রে জন্মের পরেই শিশুর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
চিকিৎসক জানান, এই শারীরিক অবস্থার ক্ষেত্রে জন্মের পরে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে ক্যাথিটারের মাধ্যমে এক ধরনের কয়েল প্রবেশ করানো হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহ কমে। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে শারীরিক জটিলতা তৈরি হয় শিশুটির।
অরবাক জানান, এই শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ধরনের শিশুদের মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ। যারা বেঁচে থাকে, তাদের স্নায়ুর সমস্যা দেখা দেয়।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মায়ের গর্ভে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিল শিশুকন্যা ডেনভার। আলট্রাসাউন্ড করার সময় জানা যায়, তার মস্তিষ্কের রক্তনালীতে সমস্যা রয়েছে। অনেক শিশুই গর্ভস্থ থাকার সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়। জন্মের পর তাদের অনেকেই আর বাঁচে না। ডেনভারেরও হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। রক্তনালীর সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গর্ভে থাকার সময় ৩৪ সপ্তাহে ডেনভারের মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। ইউটেরাসে থাকা অবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ডের সাহায্য নিয়ে রক্তনালীর অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন সে সুস্থ।
জানা গেছে, সফল অস্ত্রোপচারের দুই দিন পর ওই নারীর সন্তান প্রসব করান চিকিৎসকরা। জন্মের সময় ওই শিশুর ওজন ছিল ৪.২ পাউন্ড বা এক কেজি ৯০০ গ্রাম, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম। তবে তার স্নায়ুগত সমস্যাগুলো খুবই সীমিত ছিল। জন্মের তিন সপ্তাহ পরে, শিশুটির কোনও কার্ডিওভাসকুলার সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। এমআরআই স্ক্যানেও মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক রক্ত প্রবাহের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ডা. অরবাক বলেন, “আমরা এটা দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছি যে, (এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে) সাধারণত জন্মের পর খুব দ্রুত অবস্থার অবনতি হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যায়নি।”
বর্তমানে ওই সুস্থ রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে আমরা এটা জানাতে পেরে আনন্দিত যে, শিশুটি লক্ষণীয়ভাবে শারীরিক উন্নতি করছে, কোনও ওষুধ ছাড়াই, স্বাভাবিকভাবে খাচ্ছে এবং ওজন বাড়ছে। তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তার মস্তিষ্কে কোনও নেতিবাচক প্রভাবের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র: ডেইলি মেইল, ফক্স নিউজ, টেলিগ্রাফ, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, সিএনএন, সিবিএস নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।