পাকিস্তানের প্রবীণ রাজনীতিক মাওলানা ফজলুর রেহমান ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে টেনে নামানোয় শুরু থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। সেই আন্দোলনে সফলও হয়েছেন তিনি। ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী কয়েকটি দলকে জোটবদ্ধ করে ক্ষমতাচ্যুত করেন ইমরানকে। পরে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লীগ নেতা শাহবাজ শরিফ। কিন্তু এরপর থেকে ক্ষমতাসীন জোটে মতবিরোধ ক্রমেই বাড়ছে। শুরুতে সমস্যা ছিল মন্ত্রিত্ব নিয়ে, এখন নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও বেঁধেছে বিরোধ।
ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে থেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। এখন ক্ষমতাসীন জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-এর প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমানও একই দাবি জানিয়েছেন।
এ সপ্তাহে ইসলামাবাদে নিজের দল জমিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলুর (জেইউআই-এফ)-এর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ফজলুর রেহমান বলেন, নতুন এই সরকার কোনোভাবেই এক বছরের বেশি চলা উচিত নয়। তার কথায়, নতুন এই সেটআপে জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলামের নিজস্ব পরিচয় রয়েছে এবং তাদের (জোট অংশীদারদের) বলছি, আমরা এখনো অবিলম্বে নির্বাচন চাই।
ইমরান খানকে ইঙ্গিত করে ফজলুর রেহমান বলেন, যদিও তিনি চলে গেছেন এবং আমরা তাকে প্যাকিং করে পাঠিয়েছি, তবুও আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের কাছে সেই আমানত ফিরিয়ে দেওয়া, যার জন্য আমরা এতদিন সংগ্রাম করেছি।
নির্বাচনে সম্ভাব্য কারচুপি ও ভোটগ্রহণ ব্যবস্থা নিয়ে জোট শরিকদের মধ্যে আশঙ্কা দূর করতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন জেইউআই-এফ প্রধান। তিনি বলেন, সুযোগের একটা সীমা থাকে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অকারণে ক্ষমতা আকড়ে থাকবে না।
তবে ফজলুর রেহমানের এই দাবির সঙ্গে একমত নয় শাহবাজের সরকার তথা তার দল মুসলিম লিগ। শুক্রবার পাকিস্তানের নতুন তথ্যমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, সরকারের মেয়াদ পুরোপুরি শেষ না হলে কোনো নির্বাচন নয়।
গত ১৮ এপ্রিল মাওলানা ফজলুর রেহমান যখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি বা পরামর্শ উপস্থাপন করেন, তার কয়েক ঘণ্টা পরেই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন শাহবাজ শরিফ। তবে সেই মন্ত্রিসভা কেমন হবে, তা নিয়েও জোট শরিকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা গেছে।
মাওলানা ফজলুর শাহবাজের মন্ত্রিসভায় যোগ না দিলেও তার দল প্রেসিডেন্ট পদের দাবি জানায় এবং আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি) ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মহসিন দাওয়ারকে একটি করে মন্ত্রণালয় দেওয়ার পরিকল্পনায় ক্ষোভপ্রকাশ করে।
মাওলানা ফজলুর রেহমান ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম প্রধান শরিক পিপিপির কো-চেয়ারপারসন আসিফ আলি-জারদারিকে নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং যেসব দল বা ব্যক্তি জেইউআই-এফের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়েছে তাদের কেন দুটি মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এর আগে মিত্র সব দলের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পিপিপি নতুন মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন জারদারি।
পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট। সরকার সেই পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে পরের ৬০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর তার আগে পার্লামেন্ট ভেঙে দিলে সেই দিন থেকে ৯০ দিনের ভেতর নির্বাচন দেওয়ার বিধান রয়েছে পাকিস্তানে।
তথ্যসূত্র: ডন, উইকিপিডিয়া
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।