অনেক তরুণ-তরুণী টিকটকে মত্ত, দিনরাত শুধু টিকটক নিয়েই পড়ে থাকেন। এই টিকটকে এখন ফাঁদ পাতছে মাদকচক্র। আর এ চক্রের পাতা জালে পা দিচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। ক্রমশ তারা ঢুকে পড়ছেন অন্ধকার জগতে। সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় এমন একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় নারকোটিক সেল। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই সেলের এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বাংলা স্কুলে ছাত্রীদের মাদকাসক্তির শিকড় খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে টিকটক নামক জনপ্রিয় অ্যাপটির নাম। দেশটির গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, মজার ছলে টিকটকের হাত ধরেই নেশার জগতে ঢুকছে স্কুল পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ার অন্দরে ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধ চক্র তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে কখনও ভিন রাজ্যে। কখনও আবার মাদকচক্রে জড়িয়ে দিচ্ছে অজান্তেই।
এ মুহূর্তে অতি পরিচিত অ্যাপ টিকটকে বিভিন্ন গান, বিখ্যাত সিনেমার সংলাপসহ নানা রকম অডিও’র সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করে আপলোড করা যায়। অশ্লীলতা ও বিকৃতির অভিযোগে ভারতে কিছুদিনের জন্য অ্যাপটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যদিও তা ফের চালু হয়। টিকটকে আসক্ত হওয়া অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সম্প্রতি ১০ দিনের জন্য বহিষ্কার করে ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘টিকটক অ্যাপ যে কী ভয়ংকর হতে পারে, সম্প্রতি বিপথগামী কয়েকজন ছাত্রীর কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে উঠে এসেছে সেই তথ্য।
তিনি জানান, ‘সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী ভয়ে ভয়ে এসে দিদিমণিদের জানায়, এক সহপাঠী তাকে মুম্বাইয়ে অনেক টাকার চাকরির অফার দেয়।’ শুনেই কেমন যেন সন্দেহ হয় দীপান্বিতাদেবীর। শুরু করেন খোঁজ নেয়া। ছাত্রীদের থেকে প্রথম দিকে সেরকম কোনও তথ্য না মেলায় ডেকে পাঠানো হয় অভিভাবকদের। শুনে তো আকাশ থেকে পড়েন ছাত্রীদের বাবা-মা। তখন খোঁজ পড়ে তাদের মোবাইলের। তাতেই কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ে সাপ। দেখা যায়, নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েরা বাবার কাজের মোবাইল ফোনে টিকটক অ্যাকাউন্ট খুলে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ কলকাতার আরেক বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার অভিজ্ঞতা আরও ভয়ংকর। তিনি জানান, ‘সম্প্রতি তাদের স্কুলের কয়েকজন মেয়েকে স্কুলের সময়ে স্বল্পবাসে দেখা গেছে বিভিন্ন হুক্কাবারের বাইরে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ডেকে পাঠানো হয় অভিভাবকদের। দেখা যায়, সেখানেও মাদকচক্রে ঢুকে পড়ার মূলে রয়েছে টিকটক অ্যাপ। বয়ঃসন্ধির মেয়েদের অঙ্গিভঙ্গিকে মৌখিক প্রশংসা করে প্রথমে ফাঁদে ফেলছে একটি চক্র। সংশ্লিষ্ট মেয়েটি ফাঁদে পা দিলেই তাকে মাদকচক্রে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিপদ বুঝে কেউ কেউ বেরিয়ে এলেও, বেশিরভাগ ছাত্রী তলিয়ে যাচ্ছে নেশার অন্ধকারে। যে কৃষ্ণগহ্বরে পা রাখলে তলিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।