স্লিম থাকার জন্য অনেকে কম পরিশ্রমের উপায় খুঁজেন। এক্ষেত্রে তারা বেল্টকে খুঁজে নেন। মনে করছেন পেটের মেদ এই বেল্ট ব্যবহারেই ঝরবে। কিন্তু সত্যিই কি কাজ হয় এতে? চিকিৎসকরা বলছেন, এই ফাঁকিবাজি করে মেদ ঝরানোর আগে দু’বার ভাবতে হবে। এই প্রক্রিয়াটা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আসলে মুখরোচক খাবার খেয়ে বেশির ভাগ মানুষই পেটে মেদ জমান। এমনিতে জিনগতভাবে অনেকেরই ভুঁড়ির প্রবণতা বেশি। এ ক্ষেত্রে বেল্ট ব্যবহারের আগে জানাটা জরুরি বেল্টের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে।
চওড়া বেল্ট পেটে টাইট করে আটকে নিয়ে বেশি তাপমাত্রার সাহায্যে ঘর্ম গ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ডের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওই অংশে প্রচুর ঘাম হয়। আর এই কারণে কিছুটা হালকা লাগে। সামান্য স্লিম মনে হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতটাই বেশি যা শরীরের পক্ষে মোটেই ভাল নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে বেল্ট ব্যবহারের ফলে যেসব রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে তা জেনে নেওয়া যাক-
* বেল্ট শরীরের মাঝের অংশের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় একশ পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। এর ফলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকের র্যাশ তো বটেই, এ ছাড়া এগজিমা বা সোরিয়াসিসের প্রবণতা থাকলে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
* অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ওজন কমছে বলে মনে হলেও আসলে ঘাম ঝরার জন্যই একটু ঝরঝরে লাগে মাত্র। আসলে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে অনেকটা পানি বেরিয়ে যায় বলে ওজন কিছুটা কমলেও তা কিন্তু খুব সাময়িক।
* বেল্ট ব্যবহারে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের পাশাপাশি রক্তচাপ থাকলে তা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেকের হার্টে চাপ পড়ে বুক ধড়ফড় করতে পারে।
* ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি পেটে এই বেল্ট বেঁধে রাখলে পরবর্তীকালে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। আসলে স্পার্মের জন্যে লাগাতার গরম মোটেও ভাল নয়। এর ফলে একদিকে স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়, অন্যদিকে টেস্টিকুলার টেম্পারেচর বেড়ে যায়। যার বলে স্পার্ম উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকে।
* বেল্টের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার প্রস্টেট ও টেস্টিক্যুলার ক্যান্সারও ডেকে আনতে পারে।
* অনেকের ধারণা এই বেল্ট ব্যবহারের পরে কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে নাকি রাতারাতি ওজন কমে। এ সম্পর্কে জাপানের একটি সমীক্ষায় বলেছে, এই কাণ্ডটি করে প্রতিবছরই অজস্র অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে মারাত্মক জ্বরের শিকার হয়।
ওজন কমাতে বেল্টের ব্যবহার দেশে দেশে এতটাই জনপ্রিয় যে প্রতিবছর এই ধরনের বেল্ট দিয়ে মেদ কমানোর চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ায় আয়োজিত এমনই এক চ্যাম্পিয়নশিপে এক খেলোয়াড়ের মৃত্যুও হয়। তারপর থেকেই বেল্টের ব্যবহারে রাশ টানছে বিশ্বের উন্নততম দেশগুলো।
চিকিৎসকদের মত হচ্ছে, স্বাভাবিক খাবার খেয়ে ও নিয়ম করে শরীরচর্চা করেই মেদ ঝরানো উজিত। ফাঁকিবাজিতে কোনও মহৎ কার্য হয় না।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।