দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সমন্বয়

সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যেতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমেও রোগীর সংখ্যা কমছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩০৭ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৫ হাজার ৯২৬ জন। তবে এই সংখ্যা সরকারি হাসপাতালগুলোর হিসাব অনুযায়ী। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য দেয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সরকারি তথ্যের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

ডেঙ্গুর বিস্তারের ক্ষেত্রে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে এডিস মশার অবাধ প্রজনন। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, শহর ও গ্রাম অঞ্চলে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী, ফুলের টব, এসি ড্রেনেজ পাইপ, নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এডিসের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক আইইডিসিআর জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা জেলায় গ্রামাঞ্চলে এডিস মশার ঘনত্ব শহরের তুলনায় উদ্বেগজনক হারে বেশি। যেখানে ঘনত্ব ২০ হলেই বিপজ্জনক ধরা হয়, সেখানে কিছু এলাকায় সূচক ১৬৩-এর ওপরে পাওয়া গেছে।

জ্বর হলে তাৎক্ষণিক এনএস-১ এবং সিবিসি টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এসব পরীক্ষা সহজলভ্য নয়। ফলে অনেক রোগী বুঝতেই পারে না যে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। প্রথম কয়েকদিন জ্বর কমে গেলে অনেকেই মনে করেন রোগ সারছে, অথচ তখন ভাইরাস দেহে শক্তি সঞ্চয় করে শক সিনড্রোম ও রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন প্রয়োজন। শুধু সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দায়ী করলে যথেষ্ট নয়। স্থানীয় সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোরও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মশা নিধন কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।