মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তার ব্যক্তিগত সহকারী জিয়ার রহমান মনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড, ফ্যাটি লিভার ও ডিমেনশিয়ার মতো জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কে এম সফিউল্লাহ। ১৯৭১ সালে তিনি দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই ওই রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধের অংশ হয়। যুদ্ধের শুরুতে তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা তার নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীর উত্তম’ খেতাব প্রদান করা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কে এম সফিউল্লাহ ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সেনাবাহিনীর ভিত্তি শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন এবং ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৯১ সালে দেশে ফিরে এলে তিনি প্রশাসনিক পদে কাজ করলেও পরবর্তীতে এক বছর ওএসডি হিসেবে রাখা হয়। এ অবস্থায় ১৯৯২ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান। অবসরের পর তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের একজন হিসেবে তার জীবন কর্ম নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে দেশ এক গর্বিত মুক্তিযোদ্ধাকে হারাল। জাতি তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।