পুলিশি বর্বরতায় রাজনৈতিক নির্দেশের প্রমাণ: এইচআরডব্লিউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
পুলিশি বর্বরতায় রাজনৈতিক নির্দেশের প্রমাণ: এইচআরডব্লিউ

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশি বর্বরতায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি জানায়, আন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতারা বেশি নির্ধারণ করতেন। সোমবার এক প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতীতে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্থার এশিয়া ডিরেক্টর ইলেইন পিয়ারসন বলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যা একটি অধিকারসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ। তবে কাঠামোগত সংস্কার না হলে এই অর্জন ঝুঁকিতে পড়বে।  


“আফটার দ্য মনসুন রেভোলিউশন” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের সময় পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে এসেছে। এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অফিসারদের গুলি করার নির্দেশ দিতেন। আরেক কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছিল সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে, যদিও স্পষ্টভাবে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আন্দোলনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছিল।  


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমন-পীড়নে জড়িত ছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দিষ্ট কিছু গুম ও হত্যার বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং কখনো কখনো সরাসরি নির্দেশও দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক কর্মকর্তা জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আজমিকে গুমের বিষয়ে হাসিনা জানতেন, এমনকি তাকে হত্যা করার পরামর্শও দিয়েছিলেন। আরেক কর্মকর্তা বলেন, র‍্যাবের গুম ও ক্রসফায়ারের ঘটনা পুলিশের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়।  


প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে গুম ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সন্তানরা রাজনৈতিক বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সংস্থাটি জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তে বাধা দিচ্ছে এবং আটক কেন্দ্রে থাকা প্রমাণ নষ্ট করছে। এছাড়া আটটি গোপন আটকস্থল চিহ্নিত হলেও সংশ্লিষ্ট প্রমাণ মুছে ফেলা হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।  


প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভূমিকা পালন করছে। অনেক অভিযোগে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার ও পুনরায় আটক করতে পারছে। আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি মামলা দায়ের হয়েছে এবং চার শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তবে বাদীদের অনেকে জানেন না, তারা কার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।  


সংস্থাটি জানায়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত বর্ষা বিপ্লব নিয়ে প্রতিবেদন করায় ১৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে কর্মরত দুই চিকিৎসককেও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা বলেন, নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে।  


এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন রাখতে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা দিতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।