মানুষের আচরণ তার ভিতরের মনকে প্রতিফলিত করে। মানুষের সঙ্গে সুন্দর ও সদাচরণ করা আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। এক কথায়, আমাদের আচরণ ও ব্যবহার যেন অন্যদের জন্য আরামদায়ক এবং সুখকর হয়, এমন চেষ্টা আমাদের সবসময় করা উচিত। একটি ভালো শব্দ বা সদ্ভাব একেকটি মানুষের মন জয় করতে সক্ষম, আবার একটি খারাপ বা অশোভন আচরণও সহজেই একজনের মনে কষ্ট দিতে পারে।
সুন্দর ব্যবহার ও আচরণ বলতে আমরা যা বুঝি, তা হলো অন্যের সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলা, সবার সঙ্গে সালাম-প্রণাম করা, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, কর্কশ ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া থেকে দূরে থাকা এবং হাসিমুখে কথা বলা। এমন আচরণও অন্তর্ভুক্ত, যেখানে অন্যের দুঃখে শোকপ্রকাশ ও বিপদে সহানুভূতি দেখানো হয়। এগুলো কোনো ছোট ব্যাপার নয়, বরং একে একে সকলের ওপর ভালো প্রভাব ফেলে।
তবে, আমরা প্রায়ই আমাদের আচরণে সচেতন থাকি না, যার ফলে অল্প অসতর্কতা বা ভুলে অন্যদের কষ্ট দেওয়া হতে পারে। আমাদের উচিত সবসময় এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা, যাতে কেউ আমাদের কারণে কোনো কষ্ট না পায়।
ধারণা করা হয়, যার আচরণ যত সুন্দর, সবাই তাকে তত বেশি সম্মান ও ভালোবাসা দেয়। এই আচরণ আমাদের চরিত্রের একটি পরিচয়। আমাদের আচার-ব্যবহার যদি খারাপ হয়, তা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়, আর যদি ভালো হয়, তবে তারা আমাদের কাছাকাছি আসবে।
আল্লাহর কাছে সুন্দর আচরণের বড় মূল্য রয়েছে। একাধিক হাদিসে রাসূল (সা.) সুন্দর আচরণ ও সদাচরণের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, "সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো-আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ।" (সুনানে তিরমিজি) এর মাধ্যমে তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন, সুন্দর আচরণ কেবল এই দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতেও আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সেই, যার আচরণ সুন্দর। রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।" (সুনানে তিরমিজি)
এছাড়া, রাসূল (সা.) বলেছেন, "যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি।" (সুনানে আবু দাউদ)
এতসব হাদিস আমাদের জানাচ্ছে যে, সুন্দর আচরণ শুধু দুনিয়াতেই নয়, পরকালে আমাদের জন্য প্রশান্তি, সম্মান ও জান্নাতের পথ খুলে দেয়। তাই, আমাদের উচিত সর্বদা সুন্দর আচরণ ও ব্যবহার অনুসরণ করা, যাতে আল্লাহ আমাদের সম্মানিত করেন এবং পরকালে আমাদের জন্য সুসম্ভাবনা তৈরি হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাবেক ইমাম, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।