বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর জন্য সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাস কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর তিনি এই তথ্য জানান। তার মতে, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সরঞ্জাম ক্রয় করা হবে, যা সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
উপদেষ্টা আরও জানান, বিজিবির কাছে বর্তমানে যেসব অস্ত্র রয়েছে তা প্রাণঘাতী এবং সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হলেও, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের মতো কম শক্তিশালী অস্ত্র তাদের কাছে ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘বিজিবি সীমান্তে আগের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, তবে সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাসের মতো অস্ত্র তাদের জন্য নেই।’’
এসময় তিনি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সাথে তুলনা করে বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে যখন দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তখন বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছিল। তবে, বিজিবি এসব ব্যবহার করতে পারেনি, কারণ তাদের কাছে এই ধরনের সরঞ্জাম ছিল না।
বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাস ক্রয়ের সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে সীমান্তের উত্তেজনা এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজনীয়তা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এখন আমরা বিজিবিকে সেসব জিনিস ক্রয়ের অনুমতি দিয়েছি, যাতে তারা সীমান্ত পরিস্থিতি আরো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে।’’
এছাড়া তিনি জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল রয়েছে এবং এর মধ্যে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। তবে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিজিবি সীমান্তে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিজিবির কাছে যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল, সেগুলো প্রাণঘাতী, কিন্তু সেগুলো সব সময় ব্যবহার করা যায় না। তবে, সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাসের মতো কম ক্ষতিকারক অস্ত্র ব্যবহার করলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
এদিকে, বিদেশি নাগরিকদের অবৈধ বসবাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৪৯ হাজার ২২৬ বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন, কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৪৮ জনে কমে এসেছে। এই অবৈধ বসবাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের জন্য সরকারের সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, এই সময়সীমার পর অবৈধভাবে বসবাস করা বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করা বিদেশি নাগরিকদের নিয়েও মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি জানান, ‘‘যে সব বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছে, তাদের জন্য অনুমতি নেওয়া উচিত। যদি তারা অনুমতি না নিয়ে কাজ করেন, তবে তাদের চাকরি দেওয়ার জন্য সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এখানে সরকারের অঙ্গীকার স্পষ্ট, বিদেশি নাগরিকদের অবৈধ বসবাস এবং কাজের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে দেশের আইন শৃঙ্খলা আরও শক্তিশালী হবে এবং বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে বিজিবি ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে সীমান্তে আরও কার্যকরী ও সুরক্ষিত ব্যবস্থা তৈরি হবে। বিশেষ করে, সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাসের মতো কম শক্তিশালী অস্ত্রের ব্যবহার সীমান্তে সংঘাত কমানোর সহায়ক হতে পারে।
তবে, এই পরিবর্তনের সাথে সাথে সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, সবার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ সীমান্ত পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনা কমে যাবে এবং কোনও ধরনের বড় ধরনের সংঘাত বা সহিংসতা ঘটবে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।