ইসরায়েল-হামাস বন্দি বিনিময়ে ৯০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পেলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
ইসরায়েল-হামাস বন্দি বিনিময়ে ৯০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পেলেন

১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দিনে ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এই বন্দি বিনিময়ের আগে হামাস তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চুক্তির আওতায় দুই পক্ষ একে অপরকে বন্দি মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে একটি স্বল্পমেয়াদী শান্তির আশা দেখা দিয়েছে।


আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রথম দিনে হামাস তিন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। এই তিনজন ছিলেন রোমি গনেন, ডোরন স্টেইন ব্রেচার এবং এমিলি দামারি। তাদের রেড ক্রসের মাধ্যমে মুক্ত করা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই মুক্তির ঘটনাটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।


এদিকে, চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা সবাই নারী ও শিশু, যারা বিভিন্ন কারণে আটক ছিলেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য খান ইউনিস হাসপাতালে পাঠানো হবে। ইসরায়েলের প্রশাসন জানিয়েছে, একজন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।


রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি বন্দি সম্প্রতি আটক হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও সাজা ঘোষণা করা হয়নি। যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে হামাসের হাতে থাকা ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের হাতে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দি বিনিময় পুরোপুরি শেষ হবে।


এ চুক্তি অনুযায়ী গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা হবে, এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারবেন। ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে, যা গাজার জনগণের জন্য একটি বড় মানবিক সহায়তা হতে পারে।


চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরাও মুক্তি পাবেন। এছাড়া, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে, যা গাজার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তৃতীয় ধাপে গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা কয়েক বছর সময় নিতে পারে। যুদ্ধের ফলে গাজার অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং পুনর্গঠন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হবে।


চুক্তির আওতায় মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহও ফেরত দেওয়া হবে, যা দুই পক্ষের মধ্যে এক ধরনের মানবিক সমঝোতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া গাজার মানুষের জন্য শান্তির আশার সূচনা হতে পারে, তবে তা পূর্ণাঙ্গ শান্তির দিকে নিয়ে যেতে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 


বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই চুক্তির প্রতি একাধিক ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। তাদের মতে, এটি এক ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির জন্য দুই পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা ও সমঝোতা প্রয়োজন।


যুদ্ধবিরতির এই চুক্তির বাস্তবায়ন গাজার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে। ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে, যেটি তাদের জীবনের মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, তবে ভবিষ্যতে এটি কতটুকু সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে।


এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুধু ইসরায়েল এবং হামাসের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটি প্রমাণ করেছে যে, দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের সমাধান কেবলমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। দুই পক্ষ যদি নিজেদের মধ্যে আরো বেশি সমঝোতা এবং সহযোগিতা দেখাতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের চুক্তি আরও ফলপ্রসূ হতে পারে।


এখন দেখার বিষয় হল, যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি কতদিন স্থায়ী হয় এবং এটি কীভাবে গাজার পরিস্থিতি এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভাবিত করবে।