ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রথম দফায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে, বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা জয়-লেখক পরিষদের নির্দেশনা মোতাবেক ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক মঙ্গলবার সাংগঠনিক কর্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে এ খবর পেয়ে সকাল থেকে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় টেন্টে এসে জড়ো হয়। বেলা ১১ টার দিকে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা পলাশ-রাকিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রধান ফটকের সামনে গেলে সেখানে বিদ্রোহী গ্রুপের কয়েকজন কর্মী দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের উপর প্রথম দফায় হামলা চালানো হয়। এ হামলায় পলাশ-রাকিবের দুই জন কর্মী ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমীন হাসান ও শামস গুরুতর আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
পরে দুপুর ২ টার দিকে দ্বিতীয় দফায় বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ২৫/৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে ইবি থানার ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ তাদের কে বাঁধা দেয়। পলাশ-রাকিব নেতাকর্মী নিয়ে প্রধান ফটোকের সামনে এসে পৌছালেই তাদের সাথে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভায় গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতে লাঠিশোটা এবং দেশী অস্ত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক এবং নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। পরে হামলার এক পর্যায়ে সংঘর্ষটি পার্শ্ববর্তী গ্রামের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। এ হামলায় সভাপতি-সম্পাদকের ১০ জন নেতাকর্মী এবং বিদ্রোহী গ্রুপের ৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দুই গ্রুপের নেতারা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ড. আনিচুর রহমান, সহকারী প্রক্টর প্রভাষক আরিফুল ইসলাম এবং প্রভাষক শহিদুল ইসলাম দায়িত্ব পালনের সময় আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে গুরুতর অবস্থায় কুষ্টিয়া মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বাকিদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল, কুষ্টিয়া মেডিকেল ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়ও ঘটে। পরে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা প্রশাসনের উপর চড়াও হয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক আধাঘন্টা অবরোধ করে রাখেন। সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মহাসড়ক অবরোধ উঠিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটোক বিকাল ৪ টা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখেন। ককটেল বিস্ফোরণ সহ আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিত থাকার শর্তেও কোন গ্রেপ্তার না করে নিরব ভুমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
এবিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে চাচ্ছিলাম। এজন্য তারাও এক হয়েছিল কিন্তু সেখানে তারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেয়। আর তার প্রতিবাদে আমরা মিছিল দিলে সেই মিছিলে পুনরায় হামলা চালিয়ে আমাদের সাধারন সম্পাদক সহ বেশ কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং অনেকেই আহত হয়। তাই তদন্ত সাপেক্ষে আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা মিজানুর রহমান লালন বলেন, পলাশ ও রাকিব বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে আমাদের গ্রুপের কমপক্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় ইবি থানার (ভারপ্রাপ্ত) ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ বলেন, সকাল হতে একটা টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পলাশ-রাকিব গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত। লোকজন নিয়ে তারা আজ ক্যাম্পাসে আসার জন্য চেষ্টা করেছিল। পদবঞ্চিত গ্রুপ লালন-আরাফাতরা তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেয়ার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এসময় দু'পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মনে হয় কয়েকজন আহত হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনটা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ আমি পেয়েছি, তবে অস্ত্রের ব্যবহারের কোনো খবর আমি পাইনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ড. আনিচুর রহমান বলেন, মূলত ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সম্পাদক তাদের অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে চেষ্টা করে। এসময় বিদ্রোহীদের ধাওয়ায় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আহত হয়। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি এবং পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখন শান্ত রয়েছে। প্রথমত তারা হাইওয়ে বন্ধ করে দেয়, পরে আমরা কথা বললে তারা হাইওয়ে ছেড়ে দেয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়, এখন আমরা কথা বলছি, আশা করি দ্রুতই তারা প্রধান ফটক খুলে দেবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে ইবি শাখার ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান কমিটির একটি গ্রুপ এবং অপর দিকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘ দিনের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার শর্তেও পদ না পেলে এ গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটি শোভন-রাব্বানী পরিষদ ইবি শাখা ছাত্রলীগের এ কমিটি দেন। এতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম পলাশ কে সভাপতি এবং ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম রাকিব কে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেন। শোভন-রব্বানীর দেয়া কমিটির মেয়াদ দুই মাস না গড়াতেই সাধারণ সম্পাদক রাকিবের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে কমিটি আনার অভিযোগ উঠে। এরই জের ধরে বিদ্রোহী গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ক্যাম্পাস থেকে তাদের কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিতাড়িত করেন। ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে বর্তমান কমিটির পলাশ-রাকিব বেশ কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় বিদ্রোহী গ্রুপ। এই ঘটনার জের ধরেই সংঘর্ষ ঘটেছে বলে জানা যায়।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সংঘর্ষের কারণ উদঘাটন করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী এ তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
তদন্ত কমিটিতে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিনকে আহ্বায়ক করে ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার এবং বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়েছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।