রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এবং সাংবাদিক আরাফাত হত্যাচেষ্টা মামলার দুই বছরেও মামলার চার্জশিট জমা না দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কর্মরত সাংবাদিকরা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মর্তুজা নুর বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছে। ২০১৬ সালে আমি ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছি। ২০১৭ সালে সাংবাদিক আরাফাতের ওপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে সাংবাদিক আলী ইউনুস হৃদয়ের ওপরও হামলা করে। এসব হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু আজ দুই বছর পার হলেও পুলিশ প্রশাসন হত্যাচেষ্টা মামলার কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এসব ঘটনায় নীরব ভ‚মিকা পালন করছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এসব ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
রাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সুজন আলী বলেন, আমরা প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমাদের ওপর হামলা হলে প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করেছি। তবে তারা বিষয়টি জানে না বলে দাবি করেছে।’ রাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক রায়হান বাপ্পী বলেন, দুই বছরে সাংবাদিক আরাফাত রাহমানের ওপর হামলার বিচার না হওয়ায় আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে আমরা তাদের নাম, ঠিকানা, পদসহ বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দিয়েছে। অবিলম্বে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।
রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফরিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইউনুস হৃদয়, সহ-সভাপতি ইয়াজিম পলাশ, রাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জয়, কোষাধ্যক্ষ সালমান শাকিল। মানববন্ধনে আরাফাত রাহমানের সহপাঠী এনায়েত হোসেন একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্যে দেন। এসময় রাবিতে কর্মরত শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বাস ভাঙচুরের ছবি তোলার সময় দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরাফাত রাহমানের ওপর হামলা করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন আরাফাত এবং হামলায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করে নগরীর মতিহার থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, আইনবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে সাংবাদিক আলী ইউনুস হৃদয়ের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার এসআই শিহাবুল জানান, ‘মামলার তদন্ত এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুতই জড়িতদের চিহ্নিত করে আওতায় আনা হবে।’ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর আরাফাত রাহমান আমাকে কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। এমন কোন অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। হয়তো গত প্রশাসনের কাছে আরাফাত লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারে। আর সাংবাদিক আলী ইউনুস হৃদয়ের মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। তবে শুনেছি, এ ঘটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সমঝোতা হয়েছে।’
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।