স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর থেকে ভ্যাট মওকুফ করে ভর্তুতি প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়’। রাজশাহী মহানগরের জিরো পয়েন্টে শুক্রবার বিকেল ৪ টায় এই মানববন্ধন টি অনুষ্ঠিত হয়। ‘প্যাডের ভ্যাট মওকুফ করুন এবং ভর্তুকি দিন, প্যাডের জন্য পিংক ট্যাক্স গুণতে হবে কেন, পিরিয়ড নিয়ে লজ্জা নয়’ ইত্যাদি প্লেকার্ড নিয়ে অবস্থান করেন তারা। মানববন্ধনে তারা জানান, কর্তৃপক্ষ স্যানিটারি ন্যাপকিনে ৪০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। কিন্তু শহরা লের সর্বোচ্চ অর্ধ শতাংশ নারী ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারলেও উচ্চ মূল্যের কারণে সারাদেশে গড়ে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী হাইজেনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। তার পরেও জরায়ু, মূত্রনালী ইনফেকশন সহ জরায়ুমূখের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৭৩ শতাংশ নারীই পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। যেটা খুব অস্বাস্থ্যকর।
সংগঠনটির দাবি হলো- স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর আরোপিত ৪০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে, স্যানিটারি ন্যাপকিনে ভর্তকি দিতে হবে, ভ্যাট মওকুফ করে প্যাডের দাম ৪০ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে, কনডম ও জন্মনিরোধক পিল স্বাস্থকেন্দ্র থেকে নামমাত্র মূল্যে দিতে হবে, প্যাড তৈরির কাচামালের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য উন্নত ওয়াশরুম স্থাপন এবং ইমারজেন্সী প্যাড কর্ণার চালু করতে হবে, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরির জন্য উপযুক্ত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সভাপতি ও শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নওরীন আমিনা (পল্লবী) বলেন, যেকোনো মেয়ে শিশুর ঋতুমতী হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা, এ বিষয়ে ট্যাবু থাকা উচিত নয়। আর স্যানিটারি প্যাড নারীদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এটাকে বিলাসি পণ্য ভাবার উপায় নেই। অথচ সরকার এর উপর ৪০% ভ্যাট বসিয়েছেন। উচ্চমূল্যের কারণে দেশের ১২-১৫ % নারীও ঋতুকালীন সময়ে ঠিকভাবে প্যাড ব্যবহার করতে পারেন না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনও এটাকে বিলাসদ্রব্য মনে করা হচ্ছে। ‘লিঙ্গসমতা’ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি। মাসিক চলাকালে অব্যবস্থাপনা মেয়ে ও নারীদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রাখে, যা ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলছে। ৩০-৪০% মেয়ে এসময় স্কুলবিমুখ থাকে। তাছাড়া, অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করায়, ৭৩% নারী জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের উচিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে নামমাত্র মূল্যে নারীদের প্যাড সরবরাহ করা। স্যানিটারি প্যাডের ওপর কর মওকুফ করার কাজটি নারীদের প্রতি কোনো করুণা নয়, এটা তাঁদের অধিকার, ন্যায্য দাবি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমেন জানান, পিরিয়ড নারীদের খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার এবং সেই দিনগুলিতে স্যানিটারি প্যাড তাদের অধিক প্রয়োজনীয় একটা জিনিস উচ্চমুল্যের কারনে শহরের ৩০-৪০% নারী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারলেও গ্রামে প্রায় ১৫ % এর উপরে ব্যাবহার করতে সক্ষম হয় না। আর এই হাইজেনিক পদ্ধতি ব্যাবহার করতে না পারায় প্রায় ৭৩% নারী ইউরেনারি ইনফেকশন, জরায়ু ক্যান্সারের মত সমস্যায় ভোগে। পশ্চিমবঙ্গে এপ প্যাকেড প্যাড ৬ টাকায় পাওয়া যায় যেখানে ৬ টা প্যাড থাকে।তাহলে আমরা কেনো পারি না ভ্যাট না নিয়ে ভর্তুকি দিয়ে এই প্রয়োজনীয় জিনিসটার দাম কমাতে? সংগঠনের কর্মী তৌফি তাবাচ্ছুমের স ালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, প্রচার সম্পাদক নাঈম, কর্মী পলি আক্তারসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।