যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন, নতুন যুগের শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
পারভেজ সরকার স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৮ই মার্চ ২০২৫ ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন, নতুন যুগের শুরু

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টায় যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম নবনির্মিত যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব এম ফাহিমুল ইসলাম ফলক উন্মোচন, ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর ফলে উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ আরো সহজ হয়েছে এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।


যমুনা রেল সেতুটি ৫০টি পিলার এবং ৪৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত, এবং এটি যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে অবস্থিত। এই সেতুর ওপর দিয়ে দিনে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে, যা দেশের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক। সেতু উদ্বোধনের পর, প্রথম ট্রেনটি সাড়ে ৩ মিনিটে সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জের অংশে পৌঁছায়।


এছাড়া, সেতুটি ডাবল লেনের হলেও বর্তমানে সিঙ্গেল লেন চালু থাকার কারণে সেতুটির পুরো সুফল এখনো যাত্রীদের জন্য সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এম আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি এবং জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহা-পরিচালক ইতো তেরুয়ুকি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।


উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর, সেতুর পূর্ব প্রান্তের ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে যান অতিথিরা। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সেতুর গুরুত্ব এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।


নতুন সেতুটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা, যার ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), আর বাকি অর্থ সরকার দিয়েছে। সেতু নির্মাণে সহায়তা করেছে জাপানের প্রতিষ্ঠান ওটিজি এবং আইএইচআই।


২০১৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু, যা রেল যোগাযোগে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।


এবারের উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এই সেতু শুধু যাত্রী পরিবহনই নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি বড় অগ্রগতি। সেতু চালু হওয়ার ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে দ্রুতগতিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে এবং পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।