হাইকোর্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির ৯ আসামিসহ ৪৭ জনকে খালাস দিয়েছে। এ মামলায় ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। খালাস পাওয়া সবাই বিএনপি নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমান এই রায় দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রায়ের পর জানান, বিচারিক আদালতের রায় ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল। শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করতেই ২০১৯ সালে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এই রায় দিয়েছিল। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে প্রমাণ হয়েছে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ঈশ্বরদী স্টেশন এলাকায় বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুসহ অন্যান্য আসামিরা তার ট্রেন লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোঁড়েন। ঘটনার পর ঈশ্বরদী জিআরপি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল সিআইডি ৫২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচজন মারা যাওয়ায় তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে মামলাটি ডেথরেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি এই আপিল ও ডেথরেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। নির্ধারিত দিনে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে ৪৭ জনকে খালাস দেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই বিএনপির নেতাকর্মী ছিলেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা পরিচালনা করা হয়েছে। এটি ছিল রাজনৈতিক হয়রানির অংশ। উচ্চ আদালতের রায়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বলছেন, রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মামলার বাদীপক্ষ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে।
এ রায়ের পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, এই রায় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচারিক পরাজয়। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালতে আপিল করে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।