বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলেই সারি সারি পাম গাছ চোখে পড়তে সবার। প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন এই গাছগুলো কেটে ফেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ ও সমালোচনা।
লকডাউনের মধ্যে গাছ কেটে সাবাড় করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত তিনদিনে প্রশাসন ভবন চত্বরের সামনের লনে থাকা সব পাম গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলেই সারি সারি পাম গাছ চোখে পড়তে সবার। প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন এই গাছগুলো কেটে ফেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ ও সমালোচনা।
পাম গাছ কেটে ফেলে রাখার সেই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেন। ফেসবুকে ছবিগুলো পোস্ট করে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
গাছ কেটে ফেলে রাখার বেশ কয়েকটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে রাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ কে আজাদ লিখেছেন, 'করোনা তোদেরকেও বাঁচতে দিল না! আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের, তথা প্রশাসন ভবনের সামনে সারি সারি দাঁড়ানো পাম গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। জানি না তাদের কি অপরাধ ছিল। নাকি তারা করোনা প্রতিরোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বহু বছর ধরে কালের সাক্ষী এরা। আর কোনোদিন তোদের দেখা হবে না রে! ক্ষমা করিস তোরা!'
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাফিজ মিশু ফেসবুকে লিখেছেন, 'আচ্ছা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের গাছ কেটে কি শান্তি পায়? ক্যাম্পাস ছুটি হলেই গাছ কাটার মহোৎসব লেগে যায় কেন? কখনো গাছ কাটার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করে না কেন? যদি গাছ মরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে কাটা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কারও আপত্তি থাকবে না। অথবা উন্নয়ন কাজের জন্যেও গাছ কাটার বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বিগত অনেক বছর থেকেই দেখছি ক্যাম্পাস বন্ধ হলেই গাছ কাটা হয়। সৌন্দর্য্য ও পরিবেশ বিরোধী এমন ন্যাক্কারজনক কাজ কেন করেন তারা? গাছ কাটার যৌক্তিক কারণ জানতে চাই।'
মঙ্গলবার ভোরে গাছ কাটার স্থানে গিয়ে, ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন বিশ্ব পর্যটক তানভীর অপু। তিনি সেখানে বলেছেন, কমপক্ষে ২০০টির মতো পাম গাছ কাটা হয়েছে। সারা পৃথিবী যখন লকডাউনের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগী, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে গাছগুলো কাটে? এর জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, মড়ক লাগায় গাছগুলো কাটা হয়েছে। নতুনভাবে সেখানে গাছ লাগানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প কমিটি হটিকাল স্পেশালিস্ট ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞের পরামর্শে গাছগুলো কাটা হয়েছে। কারণ গাছগুলোতে মড়ক লেগেছিল। গাছ মরে যাচ্ছিল। দুই বছর ধরে বিশেষজ্ঞ টিম গাছগুলো ট্রিটমেন্ট করে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারছিল না। গাছের মড়া পাতা পড়ে রাস্তা ভরে যাচ্ছিল। পরে বিশেষজ্ঞ টিমের সহায়তায় গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে আবার সেখানে গাছ লাগানো হবে। কারণ গাছগুলোর টিম্বার ভ্যালু বা ফায়ার ভ্যালু- কোনোটাই নেই।
তিনি আরও বলেন, এই গাছগুলোকে বলে ফিশ টেইল পাম। মোট ৩৫টি ছিল। এখন সেখানে বটল টেইল পাম লাগানো হবে। কৃষি প্রকল্পের চার-পাঁচজন গত তিনদিনে গাছগুলো কাটেন। জুন মাসেই সেখানে বোটল পাম লাগানো হবে।
লকডাউনের মধ্যে কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন না কাটলে গাছ রোপণের মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছিল, তাই গাছগুলো কাটা হয়েছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।