আন্দোলন স্থগিত, আগামীকাল ক্লাসে ফিরছেন ববি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শনিবার ৬ই এপ্রিল ২০১৯ ০৮:০৫ অপরাহ্ন
আন্দোলন স্থগিত, আগামীকাল ক্লাসে ফিরছেন ববি শিক্ষার্থীরা

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বলেছেন, ‘অনেক চেষ্টার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দক্ষিণা লবাসীর জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। আমরা কখনই চাইবো না আমাদের এই ইউনিভার্সিটি নিয়ে কেউ কোন ষড়যন্ত্র করুক। আমরা কখনই চাইবো না ভিসি নতুন নতুন কোন নিয়ম করুক যেটা সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদন হবে না। সার্বিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার সচল করবো। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সাথে একাত্বতকা প্রকাশ করে বলেন, “শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে আমি একাত্বত্মা প্রকাশ করছি, আমরা চাই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন যেন অন্যদিকে না যায়, আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।” আজ (৬ এপ্রিল) শনিবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সমাধানের জন্য শিক্ষকদের সাথে বৈঠকে একথা বলেন তারা। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের টানা ১১তম দিনে শনিবার জেলা সার্কিট হাউজে এ বিষয়ে বৈঠকে বসেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সহ বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি) মোশারেফ হোসেন, জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক প্রতিনিধি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি ছাত্রদের দাবি যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। তিনিই উপাচার্যর বিষয়টি দেখবেন। আশাকরি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।  তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি বর্তমান উপাচার্য যেনো আর ক্যাম্পাসে না আসেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপাচার্যের মেয়াদ যেহেতু অল্প কদিন রয়েছে। তাই তাকে ছুটিতে চলে যাওয়ার জন্য বলা হবে। তাকে সভার এ সিদ্ধান্ত জানানো হবে। 

তিনি বলেন, এর আগে ২২ দফা দাবি পেশ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার জন্য রেজিস্ট্রারকে বলা হলে তিনিও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি বরিশালের কেউ সিন্ডিকেটের সদস্য না হওয়ায় সমস্যা দেখা দিলে সমাধান করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে, যাতে বরিশালের কেউ একজন সিন্ডিকেট সদস্য হতে পারেন। বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান জানান, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ধুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হবে। পাশাপাশি ডাইনিংও চালু করে দেয়া হবে। আর শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের কিছু জায়গায় তালা দিয়েছেন, সেগুলো খুলে দিলে রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।

তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ আগামীকাল (রোববার) সন্ধ্যার মধ্যে দিয়ে দেয়া হবে। এদিকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অভিভাবকসূলভ আচরণ না পাওয়ায় সুধী সমাজের হস্তক্ষেপে সেটা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হোক এই কামনা আমরা করি। তিনি বলেন, সভায় আমাদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপাচার্যকে (ভিসি) ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা অর্থাৎ বরিশালে ঢুকতে দেয়া হবে না-মর্মে শতভাগ আশ্বাস পাওয়ায় বৈঠকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত। তবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে দেয়া হবে না বলে জানান এই ছাত্র প্রতিনিধি। উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিব‌সের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানা‌নোর কার‌ণে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ে আ‌ন্দোলন শুরু ক‌রেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আ‌ন্দোলনরত শিক্ষার্থী‌দের ‘রাজাকা‌রের সন্তান’ ব‌লে গা‌লি দি‌লে আ‌ন্দোলন আ‌রো বেগবান হয়। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনি‌র্দিষ্টকা‌লের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ত‌বে এই ব‌ন্ধের পরও হল ত্যাগ না ক‌রে টানা আ‌ন্দোলন চা‌লি‌য়ে যান শিক্ষার্থীরা। এতে পু‌রো বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব