শিয়া ইসমাইলি মুসলমানদের নেতা আগা খান আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:১৬ অপরাহ্ন
শিয়া ইসমাইলি মুসলমানদের নেতা আগা খান আর নেই

বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা প্রিন্স করিম আগা খান পর্তুগালের লিসবনে ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার পরিবার ও ইসমাইলি সম্প্রদায় এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। শিয়া ইসমাইলি মুসলমানদের ৪৯তম বংশগত ইমাম হিসেবে তিনি দীর্ঘ ছয় দশক দায়িত্ব পালন করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী আগা খান মাত্র ২০ বছর বয়সে তার দাদার স্থলাভিষিক্ত হন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হাসপাতাল, স্কুল ও আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি এক বিশাল উন্নয়ন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন।  


সুইজারল্যান্ডে জন্ম নিলেও তিনি ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন এবং ফ্রান্সে বসবাস করতেন। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আগা খান। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজা চার্লস, যিনি তার পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছেন।  


আগা খান বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন এবং তার মালিকানায় ছিল বাহামাসে একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ, একটি সুপার-ইয়ট এবং ব্যক্তিগত বিমান। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ ছাড়াও ব্যবসা, বিশেষ করে ঘোড়া প্রতিপালন ও রেসিং খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন। ২০০৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তার সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসেবে উল্লেখ করে।  


তার প্রতিষ্ঠিত আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশে শত শত হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। তিনি পাকিস্তানের করাচিতে আগা খান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং হার্ভার্ড ও এমআইটির সঙ্গে যৌথভাবে আগা খান প্রোগ্রাম ফর ইসলামিক আর্কিটেকচার চালু করেন। তার নামে যুক্তরাজ্যে আগা খান আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড চালু রয়েছে, যা স্থাপত্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।  


ভারতের ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লির ঐতিহাসিক হুমায়ুনের সমাধি পুনর্নির্মাণে তিনি বড় ধরনের অর্থায়ন করেন। এছাড়া পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নেশন মিডিয়া গ্রুপ তারই প্রতিষ্ঠিত।  


প্রিন্স করিম আগা খানের প্রায় দেড় কোটি অনুসারী রয়েছে, যাদের বড় অংশ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও আফ্রিকায় বসবাস করেন। পাকিস্তানে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। তার মৃত্যুর পর নতুন ইমাম কে হবেন, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।  


বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও দাতব্য কার্যক্রমের জন্য আগা খান স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে বলেছে, তিনি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন এবং তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংস্থাটি কাজ চালিয়ে যাবে।  


ইউরোপের অন্যতম সফল ঘোড়া প্রতিপালনকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন আগা খান। তার বিখ্যাত ঘোড়া শেরগার ১৯৮১ সালে এপসম ডার্বি জয় করে, তবে ১৯৮৩ সালে অপহৃত হওয়ার পর সেটি আর উদ্ধার করা যায়নি।