নাম তার দিলীপ পাল। তিনি বলেন, আজ মনে হয় আমাদের ঘরটা আর থাকবে না, মেঘনা দেখেন কিভাবে ঘরটি সহ ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে। কাল থেকে কোথায় থাকবো? আমরা থাকতে হলে ভেড়িবাঁধ দিতে হবে। আমাদের বাড়ি-ঘর সব মেঘনা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।মেঘনা তীরে আমরা ভেড়িবাঁধ চাই। এখন এমন কথা শুধু দিলীপ পালের না। পানিশ্বর এলাকার শত শত মানুষের বুকের কান্না। খাওয়া-দাওয়া যাই হোক রাতে থাকবো কই-? বসতবাড়ি কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘনা ভাঙ্গনে।
সরাইল উপজেলার পানিশ্বর শাখাইতি, পালবাড়ি পাল সম্প্রদায়ের লোকজনের একমাত্র বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর তা চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে অসহায় পালবাড়ির মানুষের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল পানিশ্বর ইউনিয়নে এমন দৃশ্য এখন নৈমিত্তিক ঘটনা।নিমুতি পাল বলেন, মেঘনা নদীতে আমরার বাড়ির ঘর সব নিয়ে গেছে এখন মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকি। চার- পাচটা ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলছে। স্থায়ী ভেড়িবাঁধ না হলে মেঘনা পাড়ের মানুষকে রক্ষা করা যাবে না। আমরা বেরিবাঁধ চাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব এখন দিশেহারা। মেঘনা নদীর ভাঙনে শত শত বাড়িঘর, চাতলকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেখার কেউ যেন নেই।
এ জনপদকে রক্ষার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড অল্প জিও ব্যাগ ফেলে আটকানোর চেষ্টা করেছে। এ ছাড়া নেই কারো কোনো উদ্যোগ।এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে সরাইল পানিশ্বরের সর্বনাশা মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদী পারের শত শত ঘরবাড়ী বিলীন হয়ে গেছে। মাথা গুজার ঠাই হারিয়ে এসব লোকজন অনত্র বসবাস করছেন। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও জিও ব্যাগ ছাড়া ভাঙ্গন রোধে কোন উদ্যোগ নেই জন প্রতিনিধিদের।
সরেজমিন পানিশ্বর ইউনিয়নের গ্রামবাসীও পাল সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত এই এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলিন হচ্ছে।এ নিয়ে অতীতে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।খোজঁ নিয়ে জানা যায়,উপজেলার মেঘনা নদীর ভাঙনে শাখাইতি, পালবাড়ি, পানিশ্বর বাজারসহ রয়েছে হুমকির মুখে। একের পর নদী পাড়ের ঘরবাড়ী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চাতল কল হাট- বাজারসহ অনেক স্থাপনা ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে নদী ভাঙন ঝুঁকিতে। শাখাইতি গ্রামের রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে করে এসব এলাকার লোকজনদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। পানিশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, একের পর মেঘনা নদীর ভাঙনে বহু পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসবাস করছে। আরো বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২ থেকে ১৩ শত জিও ব্যাগ ভাঙ্গনে ফেলেছে।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি ৫ থেকে ৭ হাজার জিও ব্যাগ দেওয়ার কথা তাহা যদি আগে দেওয়া হতো তাহলে আজ আর এই অবস্থা হতো না। এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী ভেড়িবাঁধের প্রয়োজন। পানিশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিছু দিন হয় কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে।নদী ধীরে ধীরে পালবাড়ি ও শাখাইতি গ্রাম খেয়ে ফেলছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ইউনিয়নের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এমপি মহদয়কে এ বিষয় অবহিত করেছি।এসব এলাকার নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে ভেড়িবাঁধ স্থাপন করতে হবে।
সরাইল উপজেলা পরিষদ ভাইস- চেয়ারম্যান মো. হানিফ আহমেদ( সবুজ) বলেন, শুনেছি নদী ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ সঠিকভাবে করা দরকার। আমি দাবি জানাই জরুরী ভিত্তিতে এই কাজ শেষ করে। এ এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে হলে ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এলাকার মানুষের দুর্ভোগ যাতে না হয়। উপজেলা পরিষদ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মনজুর রহমান এ প্রতিনিধিকে বলেন, পানিশ্বর নদী ভাঙ্গন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ৩০ লক্ষ টাকার জিও ব্যাগের কাজ চলতেছে। এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে তিনি বলেন, মেঘনা নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে। এলাকার মানুষের জন্য ভেড়িবাঁধ স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইয়া বলেন,উপজেলার পানিশ্বর মেঘনা নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার উদ্যোগ প্রশাসন থেকে নেয়া হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগের কাজ চলমান রয়েছে। ইউএনও বলেন, নতুন করে ভাঙ্গনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেরকে জানানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সরাইল- আশুগঞ্জ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. মঈন উদ্দিন এমপি,নদী ভাঙ্গনের শিকার হওয়া মানুষদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এমপি বলেন, বতর্মানে জরুরী ভিত্তিতে পানিশ্বর নদী ভাঙ্গন এলাকায় ৩০ লক্ষ টাকা জিও ব্যাগের প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সরাইল উপজেলার পানিশ্বরের এ জমি আর নদীতে ভাঙতে দেওয়া হবে না। সরকার ভাঙ্গন প্রতিরোধে আন্তরিক তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ হলে, ভাঙ্গন থেকে পানিশ্বর এলাকা রক্ষা পাবে। সে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।