ঝিনাইদহে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ ফাঁকি দেয়ার প্রবণতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৮শে অক্টোবর ২০২২ ০৬:২১ অপরাহ্ন
ঝিনাইদহে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ ফাঁকি দেয়ার প্রবণতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল

বিশ্ব কবি   রবিন্দ্রনাথ স্কুল পালিয়েছিলেন। এমন এক ডজন নামকরা কবি সাহিত্যিক স্কুল ফাঁকি দিয়েছিলেন বলে ইতিহাসে দেখা যায়। কিন্তু হাল আমলে স্কুল ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা যেমন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তেমনি পড়ালেখাও লাঠে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে স্কুল কলেজে যায়। কিন্তু ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে। 


স্কুল ফাঁকি দিয়ে তারা বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র কিংবা নির্জন স্থানে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় মিলিত হচ্ছে। টিনএজাররা বিপথগামী হচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে মাদকে। ফলে কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। ঝিনাইদহ জেলায় স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভর-দুপুরে শিক্ষার্থীদের স্কুলে থাকার নিয়ম থাকলেও ব্যাগ রেখে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে।


 ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের পুকুর পাড় এলাকায় প্রতিদিন এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে। এভাবে শহরের ধোপাঘাটা ব্রিজ, নবগঙ্গা নদীর দেবদারু চত্বর, তামান্না পার্ক ও জোহান পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে হরহামেশাই দেখা মেলে স্কুল ড্রেস পড়া শিক্ষার্থীদের। এস বিনোদন কেন্দ্রে অনেকেই আবার ঘনিষ্ঠতায় আবদ্ধ হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিড়ি-সিগারেটের নেশায়ও মত্ত হচ্ছে তারা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে বহিরাগতরাও। 


স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, নদীর পাড়ে যখন পার্কের কাজ শুরু হয় তখন আমরা সুস্থ বিনোদনের আশায় খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের আনাগোনা। অনেক সময় ছেলেমেয়েদের আপত্তিকর অবস্থায়ও আমরা দেখতে পাই। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চারা কোথায় যাচ্ছে, স্কুলে আসছে কি না এটা দেখার যেমন আমাদের দায়িত্ব আছে তেমনি স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়াতে পারেন না। স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অভিভাবকদের জানালে ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়। 


ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লহ্মী রানী পোদ্দার বলেন, আমাদের কিছু মেয়েরা দেখা যাচ্ছে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছে না। তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা যাচ্ছে তারা বিভিন্নভাবে স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে। একপর্যায়ে অভিভাবকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাদের ডেকে আনছি এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের জ্ঞাতসারেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মেয়েরা স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে আসার নাম করে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


ঝিনাইদহ কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্তমান কিছু শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস পরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। আমার প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী সেসব স্থানে আমার টিম পাঠাই। এ বিষয়ে আমরা বাবা-মাকে জানালে তারা আমাদের বলেন, আমার সন্তান স্কুলে গেছে এমনটা করতেই পারে না। অনেকে আবার আমাদের খারাপ নজরে দেখে তাদের সন্তানকে নিয়ে কেন এ ধরনের কথা বলছি। 


সাবেক অধ্যক্ষ ও মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মূল্যবোধের অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে পারিবারিক শিক্ষারও অভাব, যে কারণে অনেক সময় তারা বিপথগামী হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এজন্যই এদের মাঝে পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন। 


ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরের চিকিৎসক ডা. অলিউর রহমান বলেন, ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক, শারীরিক নানা পরিবর্তন হয়। ফলে বিষন্নতা, অমনোযোগিতাসহ নানা সমস্যায় পড়ে। এ থেকে উত্তরণে অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি যতœবান হতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষকদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করতে হবে। 


ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম গনমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ছেলেমেয়েরা স্কুল চলাকালে ক্লাস না করে স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় পার্ক বা বিভিন্ন স্থানে বসে আড্ডা দিচ্ছে এ বিষয়টি আসলে খুবই দুঃখজনক। এই অভিযোগটি আমরা পাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা অভিভাবকদের নিয়ে একটি মিটিং করে তারা যেন তাদের সন্তানদেরকে স্কুলমুখী করেন এবং নজরদারি করেন এমন একটি মেসেজ দেবো।