ঝিনাইদহে প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের টাকা নয় ছয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৩ই অক্টোবর ২০২২ ০৭:০২ অপরাহ্ন
ঝিনাইদহে প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের টাকা নয় ছয়!

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারী ও বিদেশী দাতা সংস্থার টাকা নয় ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দকৃত এই টাকার ভাগ শিক্ষায় কর্মরত ছাড়াও প্রকৌশলী, প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির পকেটে উঠছে এমন তথ্য মিলেছে। ঝিনাইদহ জেলায় প্রাইমারি এডুকেশন ডেভালপমেন্ট প্রজেক্টের (পিইডিপি-৪) চার কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশির ভাগ কাজ না করে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 


তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে জেলার ৬ উপজেলায় এই প্রজেক্টের আওতায় বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে এক কোটি, হরিণাকুন্ডু উপজেলার ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে ৫৪ লাখ, শৈলকুপার ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে ৯০ লাখ, কালীগঞ্জে ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে এক কোটি ৩৪ লাখ, কোটচাঁদপুরে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে ২৪ লাখ ও মহেশপুর ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। 


শৈলকুপা উপজেলার নাকোইল নব জাতীয়করণকৃত প্রাইমারি স্কুলে এডুকেশন ডেভালপমেন্ট প্রজেক্টের দুই লাখ টাকার বরাদ্দ আসে। এই টাকা দিয়ে স্কুলে রং, লেখা ও গ্রিলের কাজ করানো হলেও মোট কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন তা বলতে পারেননি প্রধান শিক্ষক সুলতানা সোহেলী সিদ্দিকা। 


তিনি বলেছেন, সভাপতি শরিফুল ইসলাম তার আপন চাচা, তিনিই টাকার মোট তথ্য বলতে পারবেন। ওই স্কুলে ¯িøপ প্রকল্পের ৫০ হাজার ও শিশুদের মানসিক বিকাশ সাধনে খেলার সামগ্রী কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তবে স্কুলে কোন খেলার সামগ্রী পাওয়া যায়নি। ¯িøপ প্রকল্পের টাকায় কি করা হয়েছে তাও বলতে পারেননি প্রধান শিক্ষক সুলতানা সোহেলী। একই অবস্থা শৈলকুপার দুধসর প্রাইমারি স্কুলে। স্কুলে প্রবেশ পথে ঘাস জঙ্গলে ভরপুর। 


প্রধান শিক্ষক সাইফুজ্জামান জানান, তারা দুই লাখ টাকা পেলেও ৩০ হাজার টাকা ভ্যাট বাবদ কেটে নেওয়া হয়। বাকী টাকা দিয়ে সীমানা প্রচির, ভবন রং ও পুরানো ভবনের প্লাস্টার করা হয়েছে। 


তিনি জানিয়েছেন ¯িøপসহ আরো দুই খাতে তিনি ৬০ হাজার টাকার বরাদ্দ পান। জানা গেছে, প্রাইমারি এডুকেশন ডেভালপমেন্ট প্রজেক্টের টাকা বরাদ্দ হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে প্রাক্কালন তৈরী করবেন। সে মোতাবেক প্রধান শিক্ষক কাজ করে বিল ভাউচার প্রদর্শন পুর্বক উপজেলা প্রকৌশলীর সনদ নিয়ে বিল উত্তোলন করবেন। কিন্তু শৈলকুপা উপজেলায় ৪৫টি স্কুলে এই প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ করা হলেও উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ১৫টি প্রত্যায়ন প্রদান করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান। 


তিনি বলেন, কাজ দেখে আমরা ১৫টির প্রত্যায়ন পত্র দিয়েছি। বাকী ৩০টি স্কুলের বিল প্রত্যায়ন জালিয়াতি করে উত্তোলন করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও একই কায়দায় বিল তুলে নেওয়া হয়েছে।


 ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভ্যাট কেটে তিনি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকার কাজ করেছেন। এক লাখ টাকা স্কুলের জমি কেনার জন্য সভাপতির কাছে গচ্ছিত আছে। তিনি বলেন, বিল নিতে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে ৫ হাজার টাকা ও প্রত্যায়ন নিতে সদর উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে ৫ হাজার টাকার ঘুষ দিতে হয়েছে। এই টাকা না দিলে বিল পাওয়া যায় না। 


তথ্য নিয়ে জানা গেছে জেলার কালীগঞ্জ ও মহেশপুর উপজেলার স্কুলগুলোতে এই প্রজেক্টের টাকা সবচে বেশি লুটপাট হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের পকেটেও এই টাকা ভাগ উঠেছে বলে সাধারণ শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। জবাবদিহীতা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে সরকারী ও বিদেশী দাতা সংস্থার টাকা লুটপাট করা হলেও কারো কোন শাস্তি হচ্ছে না বলে অভিযোগ। 


শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসরাইল হোসেন জানান, এখন প্রায় সব স্কুলে দলীয় কায়দায় সভাপতি। তারা আমাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেন না। যেটুকু কাজ হয়েছে সেটা আমরা তদারকী করে আদায় করেছি। তিনি বলেন শতভাগ কাজ আদায় করতে গেলে অফিসারদের নাজেহাল বা হয়রানী হতে হবে। 


জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকারী ও বিদেশী দাতা সংস্থার টাকা নয় ছয় করার কোন সুযোগে নেই। সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সাক্ষর জাল করে প্রত্যায়ন নেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন।