ভোলায় নতুন ৩টি গ্যাস কূপের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শনিবার ৯ই অক্টোবর ২০২১ ১০:৪১ অপরাহ্ন
ভোলায় নতুন ৩টি গ্যাস কূপের সন্ধান

মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত প্রায় ৩ হাজার ৪০৪ বর্গমিটার আয়তনের দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ দ্বীপজেলা ভোলা। ধান, সুপারি আর ইলিশের গোলা এই তিনের ভোলা এই স্লোগানের মধ্যে এখন আর এই জেলার সীমাবদ্ধতা নেই। প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর দেশের সর্বদক্ষিণের এই জেলা এখন বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় জেলায় পরিণত হয়েছে।


দ্বীপজেলা ভোলায় ফের নতুন করে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের ৩টি কূপের (গ্যাসক্ষেত্রের) সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাপেক্স। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড বা বাপেক্সের উপ-ব্যবস্থাপক সৌমিত্র পাল চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপে ভোলায় ইলিশা-১, ভোলা নর্থ-২ এবং টবগি-১ নামের ৩টি কূপে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। তবে সেখানে কী পরিমাণ গ্যাস রয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলা যাচ্ছে না।


সৌমিত্র পাল চৌধুরী বলেন, রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাস ফ্রোম নতুন এই ৩টি কূপ খননের কাজ করবে। জেলায় ইতোমধ্যে ৬টি কূপ খনন হয়েছে। খুব শিগগির আরও ৩টি কূপ খনন হবে। এ ৩টি কুপের খনন শুরু হলে জেলায় সর্বমোট কূপের সংখ্যা দাঁড়াবে ৯টিতে।


বাপেক্স জানিয়েছে, জেলার বোরহানউদ্দিনের শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৪টি কূপ ছাড়াও শাহবাজপুর ইস্ট এবং ভোলা নর্থ নামে আরও দুটি গ্যাসক্ষেত্রের ২টি কূপে মোট গ্যাসের মজুদের পরিমাণ প্রায় ১.৩ টিসিএস (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট)। এরমধ্যে নতুন আবিষ্কৃত শাহবাজপুর ইস্ট কূপে মজুত রয়েছে ৭০০ বিসিএফ এবং ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রে রয়েছে প্রায় ১ টিসিএফ ঘনফুট গ্যাস। বাকি গ্যাস রয়েছে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে।


বাপেক্স আরও জানায়, বর্তমানে ভোলাতে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তার মধ্যে প্রতিদিন উত্তোলন হচ্ছে ৬৫ বিলিয়ন ঘনফুট। যা ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, একটি কারখানা ও বেশ কিছু গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের যে মজুত রয়েছে তা ভবিষ্যতে মোট মজুদের প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। 


সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুর ইস্ট নামের একটি কুপ এবং নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত থাকলেও সেখান থেকে আপাতত কোনো গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে না, তবে এসব কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। নতুন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যুৎকেন্দ্র না থাকায় গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে না। এ জেলায় আরও বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে জানা যায়। 


এদিকে ভোলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুর মমিন টুলু জানান, ভোলায় নতুন ৩টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ায় তিনি আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, নতুন গ্যাসক্ষেত্রের মাধ্যমে ভোলার যে উন্নয়নের সম্ভাবনার তা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এই গ্যাসকে কেন্দ্র করে ভোলায় বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। এতে করে ভোলা থেকে ইন্ডাস্ট্রির মালামাল মোংলা পোর্ট ও চট্টগ্রামে রপ্তানিতে অনেক খরচ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।


এদিকে ভোলার গ্যাস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান হলে আগামী কয়েক বছর পর একটি উন্নয়নশীল জেলায় রূপান্তরিত হবে ভোলা এমনটিই প্রত্যাশা ভোলাবাসীর। এতে একদিকে যেমন জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাদের দাবি, গৃহস্থালির কাজেও গ্যাস সংযোগ দেয়ার।


উল্লেখ্য, ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। সেখানে ৪টি গ্যাস কূপ খনন হয়েছে। বর্তমানে ১, ২ ও ৩ নং কূপ থেকে গ্যাস উত্তেলন করা হচ্ছে। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে মজুত রয়েছে প্রায় ১.৩ টিসিএফ ঘনফুট গ্যাস।