দেবীদ্বারে স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানি: শান্তি সমাবেশে এলাকাবাসীর ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, উপজেলা প্রতিনিধি - দেবীদ্বার, কুমিল্লা
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে মার্চ ২০২৩ ০৮:০৭ অপরাহ্ন
দেবীদ্বারে স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানি: শান্তি সমাবেশে এলাকাবাসীর ক্ষোভ

কুমিল্লার দেবীদ্বারে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক শিক্ষার্থীকে যৌনহয়রানীর অভিযোগে কারাগারে পাঠনোর ৬ দিন পার হলেও ওই বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষকর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক পদে কর্মরত।

   

ওই ঘটনায় পুলিশের সাথে ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মুখী করা, বাজারের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ও নিরীহ গ্রামবাসীকে পুলিশি হয়রানী মুক্ত করার লক্ষে ৫ গ্রাম (মাশিকাড়া, শাকতলা, পোনরা, পদ্মকোট, রামপুর)'র শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১১ টায় মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


ঘটনার ৬ দিন অতিক্রম হলেও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনকে বহিস্কার বা কোন তদন্ত কমিটি গঠন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শান্তি সমাবেশে আগতরা। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশে কেউ উপস্থিত না হওয়ায় হতাশ হন এলাকাবাসী। কারন বাজারের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ও নিরিহ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার না করার আশ্বাস পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়ার আশা করেছিল তারা।


মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ বাহারুল হকের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও গুনাইঘর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির। এসময় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক আব্দুল কাইয়ুম মূন্সী বাদল, এডভোকেট মো. সেলিম, গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতিন, মো. এমরান হোসেন প্রমুখ। 


এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর নুর মোহাম্মদ মুঠোফোনে জানান, মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়টিতে আমরা অবগত আছি। প্রধান শিক্ষক যেহেতু জেলে রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দিতে হবে, তবে কেন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি অবশ্যই রেজুলেশনে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে গ্রহন করতে হবে। যদি না করেন, তাহলে এর দায়ভার ওই পরিচালনা কমিটির ওপর বর্তাবে।

  

এর আগে গত ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের দুলারামপুর–সংলগ্ন ইসলামাবাদ গ্রামের জুনাব আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোক্তল হোসেন। ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সাত বছর আগে বিদ্যালয়টির এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে মোক্তল হোসেনের বিরুদ্ধে। তখন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে। ঐ সময় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভাগীয় ও উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়।

 

এরপর মোক্তল হোসেন দেবীদ্বার উপজেলার বারুর উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করতে চাইলে এলাকাবাসী ওই যোগদানের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন। গত ২০/০৩/২০১৯ সালের ২০মার্চ রাজনৈতিক প্রভাবে এবং মোক্তল হোসেন ভবিষ্যতে নারীগঠিত ও অর্থআত্মসাতের প্রমান পেলে তাকে প্রত্যাহারের শর্তে ৩শত টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে নিয়োগ পান। 

 

তবে এবারের ঘটনায় বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে ভূক্তভোগী পরিবারের দায়ের করা মামলায় জেল হাজতে গেলেও  তার বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।


উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোক্তল হোসেন কর্তৃক দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে শ্লীলতা হানির অভিযোগে তার বিচারের দাবীতে দিনভর বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর প্রধান শিক্ষকের লোকজন হামলা চালিয়ে কয়েক জন ছাত্রকে আহত করলে এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসা ও প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করতে আসা পুলিশ সদস্যদেরসহ এলাকার প্রায় শতাধিক লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত  পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে অবরুদ্ধ থাকা প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্য ও স্থানীদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এসময় ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ প্রায় ৩০০ রাউন্ড সটগানের গুলি বর্ষন ও বিক্ষোভকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে ছাত্র, জনতা ও পুলিশসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে প্রায় ১৫/২০জন গুলিবিদ্ধ হয়। ওই ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় এজহার নামীয় ১১জন ও অজ্ঞাতনামা ২০০জনসহ ২১১জনকে আসামি করে মামলা হয়। মামলায় প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনসহ ১৭জন জেল হাজতে রয়েছে।