বরিশালে ফসলি জমি রক্ষা অভিযানে ইউএনও'র উপর হামলা, আটক-৯

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: সোমবার ২৩শে জানুয়ারী ২০২৩ ০৮:২১ অপরাহ্ন
বরিশালে ফসলি জমি রক্ষা অভিযানে ইউএনও'র উপর হামলা, আটক-৯

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশায় ফসলি জমিতে পানি সেঁচ ও নির্গমনের জন্য নালা(ড্রেন)’র জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বাধার মুখে পরেছে প্রশাসন।  সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় ৯ জনকে আটক করা হয় ঘটনাস্থল থেকে।  যারমধ্যে বাধা প্রদানকারী সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার দুই সন্তান ব্যতিত বাকিরা সবাই দূরবর্তী মাধবপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা।


এদিকে ঘটনার সময়  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ব্যক্তিদের লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও চকলেট বোমা (পটকা) বিস্ফোরনের ঘটনাও ঘটে বলে দাবি করেছে থানা পুলিশ।  যদিও সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।


এরআগে দুপুরে বাবুগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর চাঁদপাশা ইউনিয়নের তালতলা সংলগ্ন কালিকাপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।


বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান, উপজেলা কৃষি অফিস ও নির্বাহী কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী আমরা সেখানে যাই।  ঘটনাস্থলে একটি নালার জায়গা উদ্ধারকে কেন্দ্র করে একটি পরিবারের হয়ে কিছু লোক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সরকারি লোকজনের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শরীরেও ইট-পাটকেলের আঘাত লাগে। আবার ঘটনাস্থলের পার্শবর্তী একটি বাড়ির ছাদ থেকে চকলেট বোমা (পটকা)র ও বিস্ফোরন ঘটানো হয়।


তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে থেকে দুই ভাইসহ মোট ৯ জনকে আটক করা হয়। যাদের মধ্যে ৭ জনই অন্য এলাকার মানুষ। এদের সবাই যে পরিবারটি সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছিলো তাদের হয়ে ঘটানস্থলে আসে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানাগেছে।


এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বলেন, চাঁদপাশা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আরজী কালিকাপুর গ্রামের আনুমানিক ৪৫ একর ফসলি জমিতে ৩০ জন কৃষক পরিবার ৬০-৭০ বছর ধরে চাষাবাদের কাজ করে আসছিলো।  ওই ফসলি মাঠের আবদ্ধ পানি সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম দালালের বাড়ির পাশের একটি নালা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে নিস্কাসিত হতো। কিন্তু সেই নালা ফরাট করে ফেলায় ফসলি মাঠের আবাদী জমি জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পরে। সেই জমিতে চাষাবাদ করতে না পেরে ৩০ টি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবার লিখিত অভিযোগ দেয়।


পরে উপজেলা কৃষি অফিসার, বিএডিসি’র সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ), উপ সহকারী প্রকৌশলী, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ভরাটকারী পরিবার ও কৃষকদের সাথে কথা বলেন এবং নালাটি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নিয়মানুযায়ী  জনসার্থে আজ নালাটি উদ্ধারে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে উদ্ধার কাজ শুরু করলে আঃ হালিম দালাল সাহেবের পরিবারের সদস্যদের সাথে বহিরাগত কিছু লোক তাতে বাধা দেয়। খবর পেয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমাদের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায়।  দলবদ্ধ লোকজন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চকোলেট বোমার বিস্ফোরনও ঘটায়। এসময় সেখান থেকে ৯ জনকে আটক করা হয়। যারমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নাইম হাসান ও মাইনুল ইসলামকে তিন মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বহিরাগত বাকী ৭ জন শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের বয়স বিবেচনা করে মুচলেকা দিয়ে চেয়ারম্যান ও পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।


ইউএনও বলেন, ফসলি জমি ও খালের সাথে সংযোগস্থলের গুরুত্ব থাকায় নালাটি যেখানে ছিলো সেখানেই রাখা হয়েছে।  এখানে বিভিন্ন ধরনের জমি রয়েছে, তবে জনস্বার্থে এ কাজটি নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।  আর বাধা প্র্রদানকারীরা বিকল্প কোন পথের কথা আমাদের বলেনি, আমরা ক্ষতিপূরণ ও পাইয়ে দেয়ার কথা বলেছিলাম তাতেও রাজি হয়নি।।


তবে পাল্টা অভিযোগ করেছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম দালাল । তিনি বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচনে বর্তমান ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোসলে উদ্দিনের বিরোধিতা করায় আমার বাড়ির উপর থেকে ফসলী জমির পানি নিষ্কাশনের নালা নির্মান করাচ্ছেন। আমি ক্রয়কৃত ও পৌত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪২ শতক জমির ওপরে গত ৫ বছর আগে বাড়ি তৈরি করি।  আমার জমি ব্যতিত পাশের অন্যত্র অব্যবহৃত জমি থেকেও ওই পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা গেলেও ইউপি সদস্যের ইন্ধনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের ভিটা বাড়ি নষ্ট করে নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি।  অথচ মেম্বারের কথামত আমাদের পরিবারের ওপর নির্যাতন চালানো হলো। 


তিনি বলেন, প্রশাসন আমার পুরো পরিবার ধরে নিয়ে গেছে। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই। বিনা কারনে আমার ১০ লাখ টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে। আমার ছেলেদের সাজা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হয়রানি করার বিচার চাই।


এদিকে ইউপি সদস্য মোসলে উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।  যা হচ্ছে এলাকাবাসীর স্বার্থে সবাই মিলেই করছে।