স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, শিক্ষকের ফাঁসির দাবিতে কালিয়াকৈরে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
খোরশেদ আলম, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: সোমবার ১০ই অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩১ অপরাহ্ন
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, শিক্ষকের ফাঁসির দাবিতে কালিয়াকৈরে মানববন্ধন

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মামলা দায়েরের দুদিনেও ধর্ষণের চেষ্টাকারী শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে গতকাল সোমমবার সকালে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী। এ সময় বিভিন্ন শ্লোগানে সড়ক অবরোধ ও স্কুল ঘেরাও রেখে ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভ করা হয়। 


এদিকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রধান শিক্ষককে অবরোধ রেখে লাঞ্ছিত করেন বিক্ষুব্দরা। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার বড় গোবিন্দপুর এলাকার মৃত বাছের সিকদারের ছেলে বাবুল সিকদার। তিনি স্থানীয় ফালু পালোয়ান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক।


মানববন্ধন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার বড় গোবিন্দপুর এলাকার ফালু পালোয়ান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে ওই ক্রিড়া শিক্ষকের বাড়ির সামনে পৌঁছলে কৌশলে তাকে ডেকে ভেতরে নিয়ে যান লম্পট ক্রীড়া শিক্ষক বাবুল। এ সময় ফাঁকা বাড়ি থাকায় ওই শিক্ষক নানাভাবে ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর গলা চেপে ধরেন এবং ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে খুন-জখমের হুমকি দেন ওই শিক্ষক। 


এ ঘটনার তিন দিন পর ওই ছাত্রীর শারীরিক ও মানুষিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সন্দেহ হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের চাপের মুখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত বলে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় কিছু মাতাব্বরের চাপে পরিবারের সদস্যরা আইনের আশ্রয়ে যেতে পারেনি। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে গত শনিবার সকালে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ দিতে কালিয়াকৈর থানায় আসেন। কিন্তু তাদের থানার ভেতরে বসিয়ে রেখে পুলিশ ওই অভিযোগ নিতে নানা গড়িমসি করে। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাদের অভিযোগ নেয়নি।


ওইদিন সন্ধ্যার পর তাদের থানায় বসিয়ে রেখে একদল পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বৈঠক করেছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। এ সুযোগে ওই লম্পট শিক্ষক পালিয়ে যায়। অবশেষে গভীর রাঁতে থানায় মামলা নিলেও দুদিনেও ধর্ষণের চেষ্টাকারী আসামী শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।


এদিকে দীর্ঘদিন ছুটি শেষে গতকাল সোমবার সকালে স্কুলে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে উত্তেজিত হয়ে উঠে তার সহপাঠীরা। পরে তারা ক্লাসে না গিয়ে পাইকপাড়া-জৈনার বাজার সড়ক অবরোধ ও স্কুল ঘেরাও রেখে ওই শিক্ষকের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করে। ওই মানববন্ধনে আরো অংশগ্রহণ করেন অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বিক্ষুব্দরা বিভিন্ন শ্লোগানে স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রায় ঘন্টাখানেক বিক্ষোভ করে। এছাড়া ওই লম্পট শিক্ষকের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রধান শিক্ষককে অবরোদ্ধ রেখে তাকে লাঞ্ছিত করেন বিক্ষুব্দরা। 


খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলে বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস করবে না ঘোষণা দিয়ে চলে যান বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম জানান, ওই ঘটনাটি স্কুল বন্ধ থাকাকালিন সময়ে ঘটেছে। এটা স্কুলে নয়, উনার বাড়িতে ঘটেছে। কমিটি ছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।


কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাহাদুজ্জামান আকন্দ জানান, ওই ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া স্কুলে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।