টাঙ্গাইলে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
মির্জা শহিদুজ্জামান দুলাল, জেলা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩০শে আগস্ট ২০২২ ০৭:০৪ অপরাহ্ন
টাঙ্গাইলে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামী গ্রেফতার

টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত দুই পলাতক  আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব । 


মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইল র‍্যাব -১২ সিপিসি ৩ এর কোম্পানী কমান্ডার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান ও স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি মোঃ এরশাদুর রহমান এক প্রেস বিফিং এ তথ্য জানান।


গ্রেফতারকৃতরা হলো- টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের আউলটিয়া গ্রামে স্ত্রী জাহারা খাতুন হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মো: শাহাদৎ হোসেন এবং সখীপুর উপজেলার এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী বাদল মিয়া। 


র‍্যাব  আরো জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক থাকায়  তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। 


 টাঙ্গাইল র‍্যাবের  বিশেষ একটি দল গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে আসামীদের তথ্য সংগ্রহ করে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত পলাতক আসামী মো: শাহাদৎ হোসেনকে ঢাকার আশুলিয়া কাইশা বাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও অপর আসামী যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত মো: বাদল মিয়াকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর চন্দ্রা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের টাঙ্গাইল সদর ও সখীপুর থানায়  সুস্থ  অবস্থায়  হস্তান্তর   করা হয়।


মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০০২ সালে দন্ডিত আসামী মো: শাহাদাৎ হোসেনের সাথে সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের আউলটিয়া গ্রামের জাহারা খাতুনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ থেকে ৪ মাস পরে ১০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে শাহাদাৎ। 


জাহারা খাতুনের পরিবার যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় শাহাদাৎ স্ত্রীকে নির্যাতন করে। পরে ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শাহাদাৎ শুশুর বাড়িতে যায়। সেখানে রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে। পরের দিন ভোরে বাড়ির লোকজন ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘরের দরজা খোলা দেখে  কাউকে না পেয়ে বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুজি শুরু করে। পরে বাড়ির  পাশের  একটি পুকুরে জাহারা খাতুনের লাশ ভেসে থাকতে দেখে।


পরে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। লাশের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। পরে নিহতের ভাই ইউনুস আলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।  এ মামলার আসামী শাহাদাৎ হোসেন সাত মাস জেল হাজতে থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে  টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক আসামীর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন।


অপরদিকে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার একটি গ্রামের এক কলেজ ছাত্রীকে ফুসলিয়ে  অপহরণ করে নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে দন্ডিত আসামী বাদল মিয়া  আটকে রেখে  দীর্ঘ ৬ মাস ওই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। পরে ভিকটিমকে সেই নির্জন কক্ষ থেকে বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায়  গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই সখিপুর থানায় মামলা করেন। 


পুলিশ বাদলকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে আসামী  স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। দীর্ঘদিন হাজতে থাকার  পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আসামী বাদল মিয়া পলাতক হয়। পরে  টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক  আসামী বাদল মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো একবছর সশ্রম কারাদন্ড দেন।