অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফীর বিদায়ী ম্যাচে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে লিটন-তামিমের সেঞ্চুরির পর বল হাতেও অপ্রতিরোধ্য ছিল টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত ১২৩ রানের জয়ে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করেছে মাশরাফীর দল। একইসঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে এটি তার ৫০তম জয়।
ম্যাচের মাঝে বৃষ্টি বাধায় প্রতি ইনিংসের দৈর্ঘ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয় ৪৩ ওভার। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রান করে বাংলাদেশ। তবে ডিএল মেথডে জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪২ রান। জবাবে ২১৮ রানেই অল আউট হয় তারা।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে ওপেনিংয়ে নামেন তিনাশে কামুনহুকামওয়ে ও রেগিস চাকাভা। ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই কামুনহুকামওয়েকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান মাশরাফী। এ ওপেনার করেন ৪ রান। এর কিছু পরেই ব্রেন্ডন টেইলরকে ১৪ রানে আউট করেন সাইফউদ্দিন। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া জিম্বাবুয়ের হয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়েন রেগিস চাকাভা ও শন উইলিয়ামস। তবে দুই স্পিনারের কাছে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন দুজন। ৩০ রান করা উইলিয়ামসকে বোল্ড করেন অভিষিক্ত আফিফ, ৩৪ রানে তাইজুলের ডেলিভারিতে বোল্ড হন চাকাভা।
বিপদজনক হতে থাকা মাধভেরেকে ৪২ রানে ফেরান সাইফউদ্দিন। রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হন মুতুম্বামি। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ৭ রান করে আউত হন মুতোম্বোদজি। আগের ম্যাচের ফিফটি করা তিরিপানোকে ১৫ রানের বেশি করতে দেননি তাইজুল।
একপ্রান্ত আগলে রেখে ক্যারিয়ারের ১৬তম ফিফটি তুলে নেন সিকান্দার রাজা। জিম্বাবুয়ের শেষটা একাই মুড়িয়ে দেন সাইফউদ্দিন। রাজাকে ৬১ রানে বোল্ড করার পরের বলেই শুমাকে বোল্ড করেন তিনি। এর আগে সিরিজের শেষ ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংস উদ্বোধন করেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাট করতে থাকেন দুজন। তাদের ব্যাটে নবম ওভারেই দলীয় ফিফটি পূরণ করে টাইগাররা।
দুর্দান্ত সব ক্রিকেটীয় শটের ফুলঝুরি ছুটিয়ে অর্ধশতক তুলে নেন দুইজনই। ৫৪ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি হাঁকান লিটন। অপরপ্রান্তে ৪৮তম ফিফটি পূরণ করতে তামিম খেলেন ৬০ বল। চারদিকে বাহারি শট খেলে তামিম ইকবাল শতক পূর্ণ করেন ৯৮ বলে। এটি তার ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ শতক।
জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে ১১৪ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নেন লিটন দাস। এর মধ্য দিয়ে ২২তম টাইগার ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। দেড়শ পূরণ করতে ১৩৫ বল খেলেন এ ওপেনার।
বাংলাদেশের হয়ে এ ম্যাচেই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন লিটন দাস। আগের ম্যাচেই বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। তার সামনেই এই রেকর্ডটি ভাঙলেন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪৩ বলে ১৭৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। ধ্বংসাত্মক এ ইনিংসে ছিল ১৬টি চার ও ৮টি ছক্কার মার।
লিটনের বিদায়ে ভাঙে দুজনের ২৯২ রানের জুটি যা টাইগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে যেকোনো উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পঞ্চম উইকেটে ২২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। এছাড়া উদ্বোধনী জুটিতে লিটন-তামিম ভেঙেছেন ২১ বছর আগে গড়া শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহরাব হোসেন অপির ১৭০ রানের রেকর্ড। সে রেকর্ডটিও ছিলো এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই, ঢাকায়।
লিটনের বিদায়ে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৪ বলে ৩ করে ফেরেন তিনি। এ ম্যাচে অভিষেক হওয়া আফিফ হোসেন ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে করেন ৭ রান। অপরপ্রান্তে তামিম অপরাজিত থাকেন ১২৮ রানে। লিটন তামিমের জুটি শুধু দেশের রেকর্ডই ভাঙেনি। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম উইকেট জুটিতে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম স্থানে আছে শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের ৩৩১ রান।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।