নওগাঁর কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে জমিতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে মৌসুমের শুরুতেই সার সংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা বলছেন, সরবরাহ কমার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, যার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান রোপণের কাজ চলছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর, রাণীনগর, আত্রাই, বদলগাছি, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার, পোরশা, মান্দা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রোপণ কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। চাষিরা জানান, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরবরাহ কমানোর অভিযোগ উঠেছে।
জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন, চারা রোপণের সময় জমিতে সার প্রয়োগ করা হয়েছে, তবে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সারের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে। এই সময়ে নওগাঁ জেলায় প্রায় ৭৫ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন সার প্রয়োজন হয়, যা মাসিক অনুপাতে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রির কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। তারা জানান, এমওপি, ইউরিয়া ও টিএসপি সারের প্রতি বস্তার দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় কৃষক শহিদুল ইসলাম, আব্দুস ছাত্তার ও রহিম উদ্দিন জানান, অতিরিক্ত দামের কারণে অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রয়েছে। ডিলারদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় তারা চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে পারছেন না। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররাই সংকট সৃষ্টি করছেন, ফলে তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।
জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নওগাঁয় ৭৬ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া, ডিএপি ও এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ২০৭ জন বিএডিসি ডিলার ও ১২৭ জন বিসিআইসি ডিলার সার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ, বরাদ্দকৃত সারের সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
নওগাঁ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে সার বিক্রি করছেন, যার দায়ভার পুরো ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ছে। অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি হচ্ছে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের নজরদারি থাকলেও কৃষকরা সারের দাম বাড়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।