তরুণরা এগিয়ে আক্রান্তে, মৃত্যুতে বয়স্করা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৩রা মে ২০২০ ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
তরুণরা এগিয়ে আক্রান্তে, মৃত্যুতে বয়স্করা

গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে প্রাণ গেল ১৭৫ জনের। একই সময়ে (৪৮ ঘণ্টায়) নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১২৩ জন। ফলে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯০ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও ৮ জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১৭৭। রাঙ্গামাটি বাদে দেশের ৬৩ জেলাতেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনায় ২১ থেকে ৩০ বছরের যুবকরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মোট শনাক্তের ২৬ শতাংশই এ বয়সের যুবক। এছাড়া বেশি মারা গেছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সের নারী-পুরুষ। শতকরা হিসাবে এদের সংখ্যা ৪২ ভাগ। আক্রান্তদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিং থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ১ মে পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে রোগী মোট ৮৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা শহরেই ৫৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ৯৬৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর সবচেয়ে বেশি রোগী গাজীপুরে ৩২২ জন। ঢাকা জেলায় ১০৯, নরসিংদীতে ১৫১, কিশোরগঞ্জে ২০১ আর মুন্সীগঞ্জে ১১২ জন রোগী। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে কম রোগী ফরিদপুরে ১৩ জন।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন যুবকরা। সবচেয়ে বেশি রোগী ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ। এছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগী ২৪ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রোগী ১৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৩ শতাংশ, ০ থেকে ১০ বছর বয়সী ৩ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৮ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব রোগী ৮ শতাংশ।

মৃত্যুর হিসাবে এ গ্রাফটি উল্টে গেছে। বয়স্করা কম আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে। এটা ৪২ শতাংশ। এরপরই বেশি মৃত্যু ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে; যা ২৭ শতাংশ। এছাড়া ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৩ শতাংশ রোগী মারা গেছেন। ১০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যু আছে ২ জন যা ২ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে কোনো মৃত্যু নেই।

শনিবার দুপুরে অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ছয় হাজার ১৯৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৭টি। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৬৬টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৫৫২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৯০ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এদের তিনজন পুরুষ ও দু’জন নারী। পাঁচজনই ঢাকার বাসিন্দা। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৫ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও তিনজন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৭৭ জন।

এর আগে শুক্রবার বিকালে ব্রিফিংয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭১ জন শনাক্ত হয়েছেন। আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছিল ২ জন আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন।

শনিবারের ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, নমুনা সংগ্রহের হার আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। পরীক্ষার হার আগের দিনের তুলনায় ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আগের দিনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত দিনের তুলনায় সামান্য হলেও শনাক্ত রোগীর হার কমেছে।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৬৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৬৩২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৮ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ২২ জন। সারা দেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ৯ হাজার ৬৩৮টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আছেন ৩ হাজার ৯৪৪টি। ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৬৯৪টি। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩৪১টি। ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি।

তিনি বলেন, হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৫৪৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। ফলে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৮৫০ জন। এনিয়ে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার ৩৪৯ জন ছাড় পেয়েছেন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে ৬৯ হাজার ৯৪ জন আছেন।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে। মোট মৃত্যু রোগীর মধ্যে পুরুষ ৭৩ শতাংশ আর নারী ২৭ শতাংশ। বিপরীত দিকে শনাক্ত রোগীর মধ্যে নারী ৩২ শতাংশ আর পুরুষ ৬৮ শতাংশ।

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে মোট রোগীর ৪ দশমিক ৬ শতাংশের অবস্থান। এখন পর্যন্ত একমাত্র করোনামুক্ত জেলা রাঙ্গামাটি এ বিভাগে অবস্থিত। সিলেটে রোগী আছেন ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রংপুরে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, খুলনায় ২ দশমিক ০২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, বরিশালে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ রোগীর বসবাস।