গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরাইলি সেনাপ্রধানের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:১৪ অপরাহ্ন
গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরাইলি সেনাপ্রধানের পদত্যাগ

ইসরাইলের সেনাপ্রধান হারজি হালেভি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। হালেভি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তার পদত্যাগ কার্যকর হবে আগামী ৬ মার্চ।  


পদত্যাগপত্রে হালেভি উল্লেখ করেন যে ৭ অক্টোবরের সকালে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা তাকে আজীবন তাড়া করে বেড়াবে। টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ব্যর্থতায় তার নেতৃত্বের ত্রুটি নিয়ে কট্টর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। বিশেষ করে গাজায় ইসরাইলি অভিযানের সময় হালেভির ভূমিকা নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।  


গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক অভিযানের সময় ১৫ মাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জাতিসংঘসহ শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে। আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া এক লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।  


গাজায় অভিযানের সময় হালেভির নমনীয় অবস্থানকে নেতানিয়াহু সরকারের কট্টরপন্থী মন্ত্রীরা সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এই সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলাগুলো ছিল নিষ্ঠুর এবং নির্বিচার।  


হালেভির পদত্যাগ ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নেতৃত্বের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। তার পদত্যাগপত্রে নিরাপত্তা ব্যর্থতার উল্লেখের মধ্য দিয়ে ইসরাইলি সামরিক নীতির দুর্বলতাগুলো উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।  


গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। কট্টর সামরিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসরাইলি জনগণের আস্থার অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হালেভির পদত্যাগ এ ক্ষেত্রে সামরিক নেতৃত্বের ওপর চাপ আরও বাড়াবে।  


ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার বিষয়টি শুধু দেশটির রাজনীতি নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে গাজায় প্রাণহানি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।  


এই পদত্যাগ ইসরাইলি সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা ইসরাইলের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। হালেভির পদত্যাগ শুধু তার ব্যর্থতার স্বীকৃতি নয়, বরং ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিকেও নজর দিতে হবে।