বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল, নতুন করে ৫০০ জনের প্রবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল, নতুন করে ৫০০ জনের প্রবেশ


বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনবরত রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে আরও ৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এর আগে শুক্রবারও কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে আরও দুই শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। গত দুই সপ্তাহে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।


সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের মতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ থেকে এসব রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে। মংডুর টাউনশিপের পশ্চিমে মাত্র চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদ পেরোলেই বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা। সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া এবং নুরুল্লাপাড়া গ্রামের রোহিঙ্গারা রাতের অন্ধকারে নৌকাযোগে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।


বেশিরভাগ রোহিঙ্গা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, যেমন জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া এবং শাহপরীর দ্বীপ। এসব এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সীমান্তে রোহিঙ্গাদের এই ঢল আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী জানান, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। নাফ নদ ও সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নাফ নদ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য সীমান্তরক্ষীরা কাজ করছে।


১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন জানান, কিছু রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং নতুন করে আর কেউ যেন আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


রোহিঙ্গা সংকটের ইতিহাস


২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঢল নামে। ওই বছরের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই প্রবাহে কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই সেখানে আরও চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস করছিল।


আন্তর্জাতিক চাপে ২০১৭ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়। সে সময় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্বের বিষয়গুলো নিশ্চিত না হওয়ায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালে দুইবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরার ব্যাপারে আস্থা রাখতে পারেনি।


বর্তমানে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করলেও, মিয়ানমারের চলমান সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।